গল্প

গল্প কালভার্টের মাঠ, সপ্তর্ষিমণ্ডল ও স্বাতী

কালভার্টের মাঠ, সপ্তর্ষিমণ্ডল ও স্বাতী

লেখক : শোভনলাল আধারকার

রাতের শেষ বাসটা যখন কালভার্টের উপর দিয়ে তীব্র হেড-লাইট জ্বালিয়ে চলে গেল তখন ক্ষণিকের জন্য জোনাক-জ্বলা অন্ধকার দূর হয়ে পুরো রাস্তাটা আলোকিত হয়ে উঠেছিল।ঠিক সেই সময়,অন্যদিনের মত,তমাল সিগারেটে শেষ টান দিতে দিতে,চটিতে পা গলিয়ে,আসন্ন রাত্রি-শেষে আগামী ভোরের কথা ভাবতে ভাবতে মাঠ ছেড়ে কালভার্টের উপর উঠে এলো। আলো-আধারিতে সুনন্দ বাসের গায়ে লেখা নামটা পড়তে পারল- “মনে রেখো”। কলেজ যাতায়াতের পথে কতবারই ত এই বাসটার সংগে দেখা হয়েছে-কোনদিনই ওর নামটা পড়ার ইচ্ছে হয়নি।এখন ইচ্ছে হ’ল তার কারণ আগামী কাল সকালে এই বাসটাই হবে “ফাস্ট-বাস”।মনে করতে পারল তিন বছর আগে এই বাসটাই ওকে নিয়ে এসেছিল এখানে-এই ‘হাফ শহর হাফ মফঃস্বলে’র কলেজে।‘ফাস্ট বাসে’ করেই আগামী কাল সকালে এখান ছেড়ে চলে যাবে-গত তিন বছরের সাজানো অগোছালো মেসের ঘরটি।মসৃণ পিচ ঢালা রাস্তার ‘মার্জিনে’ ইট-সুরকি বিছানো পথে হাঁটতে হাঁটতে বার বার মনের পর্দায় ভাসছিল আজ বিকালের “বিদায়-অনুষ্ঠান”এ প্রিন্সিপাল,সহকর্মী আর ছাত্র-ছাত্রীদের আবেগ-ভরা ভাষণের কথাগুলি।প্রবীণ প্রিন্সিপাল আর সহকর্মীদের স্নেহ-মিশ্রিত কথাগুলি মনে পড়ায় মনে বার ভার দ্বন্দ্ব উপস্থিত হচ্ছিল-কাজটা কি ‘হঠকারিতা’ হয়নি ত? আজকের চাকরির বাজারে যা মন্দা চলছে সেই অবস্থাতে হাতে কোন কাজ না থাকা স্বত্বেও হঠাৎ এমন ভাল চাকরিটা ছেড়ে দেওয়া সাধারণ অর্থে ‘হঠকারিতা’র পর্যায়েই পড়ে।গুণ-মুগ্ধ ছাত্র-ছাত্রীদের করুণ মুখগুলো দেখে একবার তমালের মনেও এ কথাটি যে আসেনি তা নয়।ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে কয়েকজন-ধীরা, নীলিমা, কল্পনা, সজল, সুশান্ত,মিহির-এরা ত কেঁদেই অস্থির।ওরা ভাবতেই পারছেনা কেন ওদের এত প্রিয় বন্ধু-সম, ‘ডিয়ার টি আর’ ওদের ছেড়ে চলে যাচ্ছে।তাই ‘ফেয়ারওয়েলে’র শেষে সকলের চোখের আড়ালেই চলে এসেছিল এই কালভার্টের মাঠে-যেখানে গত তিন বছরের প্রতিদিন সন্ধ্যায় এসে বসত প্রফেসর তমাল রায় চৌধুরী। শহরতলির বাইরে প্রায় গ্রামের সীমানায় এই কলেজটিতে পড়াতে এসে ছাত্র-শিক্ষক নির্বিশেষে সকলের প্রিয় হয়ে গিয়েছিলেন তমাল রায় চৌধুরী।তাই তমাল রায় যখন হঠৎ চাকরিতে ইস্তফা দিল তখন সকলে অবাক না হয়ে পারেনি।কিন্তু তমাল একবারও মুখ খোলেনি-কেন সে এ কাজ করল।ছাত্র-ছাত্রীরাও জানে ‘স্যার’ পড়াতে ও পড়তে কত ভালবাসেন।

চলতে চলতে অন্যমনস্ক ভাবে পকেটে হাত দিল,যন্ত্রচালিতের মত প্যাকেট থেকে একটা সিগারেট তুলে নিয়ে  দু’ঠোটের মাঝে চেপে ধরল - দু’বারের চেষ্টায় দেশলাই জ্বেলে সেটায় আগুন জ্বালিয়ে একরাশ ধুঁয়া ছাড়ল।ধুঁয়ার কুণ্ডলী যখন মাথা ছেড়ে উপরে উঠে গেল তখন তমাল রাস্তার কাঁকর বিছানো মার্জিন ছেড়ে মেঠো পথে নেমে এলো।অদূরে আলোকিত ছাত্রদের কলেজ হোস্টেলটা দেখা যাচ্ছে।তমাল যেন এক পথহারা সমুদ্র-জাহাজ আর অন্ধকার সমুদ্রে আলোকিত হোস্টেল বাড়িটা একটা ‘লাইট-হাউস’।

এমনই পথ-হারা মনে হয়েছিল নিজেকে সাত-বছর আগে এমনি এক সন্ধ্যায়:
রোজকার মত সেদিনও সন্ধ্যায় বন্ধু সুবীরদের বাড়ি গিয়েছিল-সুবীর কোথাও বেরিয়েছিল। বারান্দায় চেয়ারে বসেছিলেন ওর বাবা- শরীরের ডান দিকটায় পক্ষাঘাত-গ্রস্থ বরদা বাবু।রোজই থাকেন।সুবীরের অবর্তমানে বন্ধুরা



 

-২-




  নিজেদের মধ্যে ঠাট্টা করত, “মহাকাল” বলে। এত কষ্টে আজও এক চিলতে হাসি খেলে গেল তমালের মুখে-‘ছেলে-মানুষী’ বয়স তখন।

“কে, তমাল ?এসো,কিন্তু সুবীর ত কোথায় যেন বেরুলো”,ডাকলেন বরদা বাবু।

মনে মনে হেসেছিল তমাল-সুবীরের বাবা কি বোঝেন না যে তমাল সুবীরের সংগে গল্প করতে আসেনা-আসে ওর ছোট বোন স্বাতীকে এক ঝলক দেখতে আর সম্ভব হ’লে দু’টো একটা কথা ছুঁড়ে দিয়ে উত্তরে ওর মিষ্টি মুখের এক টুকরো হাসি দেখতে? সুবীরের বন্ধুদের মধ্যে তমালকেই বেশি পছন্দ করতেন বরদা বাবু -বোধহয় ভাল ছাত্র বলে।সুবীর বলেও ফেলেছিল একদিন, ”তুই ত বাবার মতে ‘ভাল ছেলে’-আমি নাকি ‘ইয়ুজ-লেস’।

হেসে ব্যাপারটা হালকা করে উত্তর দিয়েছিল তমাল, “ছাড়,ভাই, সব বাবাদের কাছেই নিজের সব ছেলেরা অপদার্থ আর তার বন্ধুরা সব ভাল”।

কলেজ-ফেরত স্বাতীকে রাস্তায় পেয়ে একদিন বলেছিল মনের কথা- এম এস সি পাশ করে চলে যাবে গ্রামের দিকে কোন স্কুল-কলেজে চাকরি নিয়ে।সেখানে ঘর বসাবে স্বাতীকে নিয়ে।নেহাতই সাদা-মাটা স্বপ্ন।ভাল ছাত্র হওয়া স্বত্বেও বিরাট কোন উচ্চাশা ছিলনা তমালের। স্বাতীও ছিল তমালের এই তুচ্ছ স্বপ্নের সাথী-ওর সুন্দর নীলচে আভার চোখ দু’টো চকচক করে জ্বলে উঠত তমালের স্বপ্নের ছোঁয়ায়। ঠাট্টা করে একদিন বলেছিল তমালকে “তোমার কলেজে কোন ‘ল্যাব এসিট্যান্ট’এর চাকরি পাইয়ে দিও আমাকে নাহ’লে কাছাকাছি কোন স্কুলের প্রাইমারী সেকশনের টীচারি ত পেয়েই যাবো-কি যাবনা?” তমাল ওর ঠাট্টার কোন জবাব না দিয়ে বলেছিল, “এই আইস-ক্রিম’ খাবে?”

স্বাতীর শরীর একটু মোটার ছাপের হওয়া স্বত্বেও আইস-ক্রিমে ওর কোন দিন ‘না’ ছিলনা।ওর এই দুর্বলতা তমাল ভাল করেই জানতো। তাই ভেবে রেখেছিল ‘বিয়ের পরে’ ও কোন কারণে রেগে গেলে ওকে মানাবার সহজ রাস্তা হবে ফ্রিজে সব সময় ওই বস্তুটি মজুত রাখা।

“বসো তমাল, ও এখুনি এসে পড়বে”, ডাকলেন বরদা বাবু।

তমাল একটা চেয়ার টেনে বসে পড়েছিল-ফাঁসির আসামী যেমন বসে থাকে জজ সাহেবের সামনে ‘রায়’ শোনার আগে।

“বুঝলে তমাল,শেষ পর্যন্ত এটাই ঠিক করলাম”, তমালের চমক ভেঁঙেছিল বরদা বাবুর কথায়। আধো অন্ধকারে মুখ তুলে চাইল বরদা বাবুর মুখের দিকে। বরদা বাবু বলে চলেছিলেন, “তুমি ঘরের ছেলের মতন,তাই বলতে বাধা নেই।আমার বয়স হয়েছে,একটা ‘স্ট্রোক’ হয়ে গেছে-কবে কি হয় জানিনা।সুবীরটাও এখনো পর্যন্ত দাঁড়াতে পারল না।স্বাতীর পরে আবার শাশ্বতী আছে। স্বাতীর জন্যে একটি ভাল ছেলে পেয়েছি- ব্রাইট স্টুডেন্ট, বি সি এস পরীক্ষা দিয়েছে।ওদের মোটামুটি পছন্দও হয়েছে স্বাতীকে,----”। মাথাটা ঝ-ঝাঁ করে উঠেছিল তমালের-মনে হ’ল একশোটা হাতুড়ী একসঙ্গে মাথায় ঘা দিচ্ছিল। বরদা বাবুর বাকী কথাগুলো আর কানে যায়নি কান দুটো বুঝি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল ,চোখ ঝাপসা হয়ে এসেছিল তমালের।ভদ্রতার খাতিরে আর কয়েক সেকেন্ড অন্ধ-বধিরের মত বসে থেকে উঠে পড়েছিল।রাস্তায় নেমে মাতালের মত টলতে টলতে,কুঁজো হয়ে শরীরের ভার সামলাতে সামলাতে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে অনেক রাতে বাড়ি



   
-৩-




  ফিরেছিল।ঘরে ঢুকে বিছানায় আছড়ে পড়ে আর নিজেকে সামলাতে পারলনা।অঝোর ধারা কান্নার বন্যায় ভেসে গেল বালিশ আর বিছানা।

একদিন পরেই তমাল দেশ ছেড়েছিল-স্টেশনে যাবার পথে কলেজে গিয়ে স্বাতীর সঙ্গে শেষ দেখা করেছিল।নীরব স্বাতী শুধু তমালের দিকে চেয়ে কেঁদেছিল। চোখ মোছার জন্য তমাল পকেট থেকে রুমালটা বের করে দিয়েছিল। স্বাতীই বানিয়ে দিয়েছিল ওর নাম আর “মনে রেখো”লেখা রুমালটা।

মামার কাছে পাটনায় চলে গিয়েছিল-সেখান থেকেই এম এস সি পরীক্ষা দিয়েছিল-প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে সোনার মেডেলও পেয়েছিল।পাটনা থাকাকালীন অনেক দিনের সখ বেহালা বাজানোও শিখে নিয়েছিন মামার কাছেই-মামা ছিলেন বেহালা’র স্থানীয় ওস্তাদ।কলকাতার বড় কলেজে চাকরি পেয়েও সেই ‘অফার’ ছেড়ে চলে এসেছিল দক্ষিণ-বঙ্গের শহরতলির এই ছোট্ট কলেজে।এখানে এসে খুশি হয়েছিল তমাল-এখানের আকাশে-বাতাসে যেন ওর প্রথম যৌবনে দেখা স্বপ্নের সঙ্গে কোন অমিল ছিল না-এখানকার বাতাসে তমাল পেতো শিউলি,বকুল আর রজনী-গন্ধার সুভাস।ঝির ঝিরিয়ে বয়ে যাওয়া ছোট্ট নদীটায় ভেসে বেড়াত হাঁস আর বকের দল।শীতের শুরুতে কিছু যাযাবর পাখিও এসে বাসা বাঁধত এর সবুজে ঘেরা কূলে কূলে।বর্ষার প্রথমে ঘন মেঘের পানে চেয়ে থাকতে ভাল লাগত তমালের।হয়ত বা,ওই মেঘের মাঝেই ও খুঁজে বেড়াত ওর হারানো প্রেমকে।

                                                                             শরতের মেঘমুক্ত  রাতের আকাশের তারারা কত উজ্জ্বল আর কত কাছে মনে হতো-যেন একটু বড় করে হাত বাড়ালেই ওদের ধরা যাবে। ট্রেনে কেনা সস্তা দূরবীনটায় চোখে লাগিয়ে তারাদের সঙ্গে কথা বলতো-হয়ত’বা ওর হারানো প্রেম ‘স্বাতী’কে খুঁজে বেড়াত ওর নিদ্রাহীন ক্লান্ত চোখ। সপ্তর্ষি মণ্ডলের তারদের সঙ্গে ছিল ওর একটা বিশেষ গভীর সম্পর্ক -ওই মণ্ডলের সব কটি তারার সাথে যেন ওর বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছিল। কখনও বা অনেক রাত অবধি আপন মনে বেহালা বাজাতো।

বুঝাবার গুণে আর প্রয়োজনে,কলেজের সময়ের বাইরে,‘স্পেশাল-ক্লাসে’র দৌলতে ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে অল্প সময়েই খুব প্রিয় হয়ে উঠেছিল তমাল রায়-ওরা গোপনে ওকে,“ডি আর, টি আর” (DR- TR) বলে নামকরণ করেছিল।আসলে তমালের উদ্দেশ্য ছিল কোন রকমে নিজেকে ব্যস্ত করে রাখা-বেহালা বাজানো,কলেজের কাজ,পড়াশুনো,ছাত্র-ছাত্রীদের স্পেশাল ক্লাসের মাঝে স্বাতীর স্মৃতি ক্রমশ ফিকে হয়ে এসেছিল। বিকালে কালভার্টের মাঠে বসে কিটস,বাইরণ,ওয়ার্ডসওয়ার্থ এর কবিতা পাঠ করে তার ব্যখ্যা শুনত ইংরাজির অধ্যাপক সুশোভন মিত্রের কাছে।নাটকীয় ভঙ্গিতে সুশোভন মিত্র মাঝে-মধ্যে ‘ওথেলো’ বা ‘রোমিও-জুলিয়েট’ থেকে ‘ডায়লগ’ বলে সকলকে সম্মোহিত করে রাখতেন।

কখনও বা বাংলার অধ্যাপক বঙ্কিম বাবুর মুখে শুনত মনসা মঙ্গল অথবা বিদ্যাপতির রাধা-কৃষ্ণের প্রেম-গাথা বা কালিদাস বর্ণিত শকুন্তলার স্বর্গীয় রূপের বর্ণনা। বঙ্কিম বাবুর পাণ্ডিত্য আর বর্ণন-কৌশল কালভার্টের পাশের মাঠটিকে রঙ্গমঞ্চ বানিয়ে দিত।এত লোকের ভিড়ে থেকেও তমাল ছিল একান্ত একা, বিশেষ করে রাতের বেলায় শুধুই নিজের জগতে বিচরণ করত। ছেলে বেলা থেকে একা থাকার অভ্যাস ছিল তাই একাকীত্বে ভয় বা অসুবিধা হ’ত না তমালের।তাই এই জীবনের অনুষ্টুপ ছন্দকে শুধু মানিয়ে নেওয়া নয়-ভালোও বাসতে শুরু করেছিল।কিন্তু এই নিবিড় নিস্তব্ধ নিস্তরঙ্গ জীবনে হঠাৎ বঙ্গোপসাগরের উত্তাল ঢেউ এসে ওকে একেবারে ভাসিয়ে নিয়ে গেল এক  পনেরোই আগস্টের সন্ধ্যায়।



-৪-
 



অঞ্চলের নতুন বি ডি ও( ব্লক ডেভেলাপমেন্ট অফিসার) সুমন্ত সেন স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে স্থানীয় গণ্য-মান্যদের        সন্ধ্যায় চায়ের নিমন্ত্রণ করেছিলেন তাঁর বাংলোতে।বেশিরভাগ প্রফেসর পর পর দুদিন ছুটি পেয়ে নিজের নিজের বাড়ি চলে গিয়েছিলেন-কেবল প্রবীণ প্রিন্সিপ্যাল অমল দে আর তমালই উপস্থিত ছিল।তাই প্রিন্সিপালের অনুরোধে অনিচ্ছা সত্ত্বেও তমালকে ওঁর সঙ্গী হতে হয়েছিল। প্রথম আলাপ-পরিচয়ের পালা শেষ হলে প্রিন্সিপাল কলেজের নতুন বাড়ির জন্য সরকারী অনুদানের ব্যাপারটা বি ডি ও কে স্মরণ করিয়ে দিলেন-বিডিও আশ্বাস দিয়ে

জানালেন,“আমার মনে আছে স্যার-সদরে আর একবার নাড়া দিতে হবে,তবে হয়ে যাবে”। প্রিন্সিপাল ধন্যবাদ জানিয়ে হাসলেন।   

                     ঠিক সেই সময়ে কাজের মেয়েটির হাতে চা আর মিষ্টির ট্রে নিয়ে হাজির হলেন স্বয়ং বি ডি ও-পত্নী শ্রীমতী সেন। বি ডি ও বলে  উঠলেন,“এসো আলাপ করিয়ে দিই ”। স্বল্প ঘোমটার আড়ালে ঢাকা হাস্যময়ী শ্রীমতী সেন সকলকে নমস্কার জানালেন।উঠে দাঁড়িয়ে নমস্কার জানাতে গিয়ে মাঝ পথেই পক্ষাঘাত-গ্রস্থ রুগীর মত তমালের হাত থেমে গেল।সামনে করজোড়ে দাঁড়িয়ে ‘তার’ই স্বাতী।পটে আঁকা ছবির মত তমালের হাত মাঝপথেই থেমে রইল। স্বাতীও নিস্পলক দৃষ্টিতে চেয়ে ছিল তমালের পানে। বি ডি ও সুমন্ত সেন কিছু অনুমান করে আবহাওয়াটা সহজ করার জন্যে উঠে দাঁড়িয়ে বলে উঠলেন, “পরিচয় করিয়ে দিই, আমার স্ত্রী স্বাতী সেন,আর স্বাতী,এঁরা এখানের গণ্যমান্য মানুষ সব-প্রিন্সিপাল দে সাহেব, প্রফেসার তমাল রায়,ডাক্তার গৌতম নায়ক, জন-নেতা প্রশান্ত মাঝি,--- ”।তমালের উপর থেকে মুখ সরিয়ে সকলকে নমস্কার জানালো স্বাতী আর,“এক্সকিয়ুজ মি,এখুনি আসছি”,বলে প্রায় দৌড়ে ঘরের বাইরে চলে গেল।

রাতে মেস-বাড়িতে ফিরে বেহালা নিয়ে বসল তমাল।অনেক রাত পর্যন্ত বেহালা বাজাল, তারপর শেষ রাতে প্রিন্সিপালের উদ্দেশ্যে ত্যাগ-পত্রটা লিখে প্রাতঃভ্রমণে বেরিয়ে পড়েছিল।

  ভোরের আকাশ-ভালো করে আলো ফোটেনি তখনও। অজ্ঞাতসারে তমালের নজর ঠিকরে পড়ল ভোরের নির্মল আকাশে-সেখানে অতি উজ্জ্বল শুকতারা জ্বল জ্বল করছিল আর তমালের অতি পরিচিত নক্ষত্রগুলো- অশ্বিনী, ভরণী, মৃগশিরা, চিত্রা, বিশাখা, পুনর্বসু এবং জ্যৈষ্ঠা মিট মিট করে হাসছিল - কিন্তু অনন্ত আকাশে স্বাতীকে কোথায়ও খুঁজে পেলনা।

Copyright © 2022 Rupkatha Live. All Rights Reserved. Powered by : Technotrick Systems.