সাহিত্য সংস্কৃতি

সাহিত্য সংস্কৃতি ২৮ তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব যেন মিলে গিয়েছিলো ছবির মেলায়

২৮ তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব যেন মিলে গিয়েছিলো ছবির মেলায়

লেখক : কেকা মিত্র

বিশ্ব মেলে ছবির মেলায় এটাই ছিলো ২৮ তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের মূল ক্যাপশন। কি ভাবে যেন কেটে গেলো নব রসে সাত দিন।

অন্য বারের থেকে এবারের উৎসব আরো যেন ছিলো কালারফুল। হাস্যরস, করুন রস,
ভয়ানক রস, বিভৎস রস, শান্ত রস, অদ্ভুত রস, রৌদ্র রস, শৃঙ্গার রস সব মিলিয়ে এবারের উৎসব ছিলো বৈচিত্র্যময়। এবারের উৎসবে কিছু কিছু দিক নিয়ে আমার লেখায় আলোকপাত করবো। যেমন পরিচালক দেবযানী আইচ প্রায় এক ঘণ্টার একটি তথ্য চিত্র বানিয়েছেন প্রয়াত আবৃত্তিকার প্রদীপ ঘোষ কে নিয়ে। সেটা যেমন অনবদ্য লেগেছে তেমন আকাশবাণীর সাংবাদিক অভিজিৎ চক্রবর্তী সুন্দরবন নিয়ে অসাধারণ একটি এক ঘণ্টার তথ্যচিত্র বানিয়েছেন ।

নাম নোনা ডাঙার উপাখ্যান। যেখানে দেখানো হয়েছে শুধু মানুষের বঞ্চনা, প্রতিদিন জীবন যুদ্ধ, বনে বাঘ, জলে কুমির, মানুষ সংসার ও পরিবার বাঁচাতে সুন্দরবনে গভীর জঙ্গলে ঢুকে মধু পারে , নদীতে মাছ ধরে এমন কি কাট কাঠে এর বাঘ এর আক্রমণে প্রাণ যায়। অভিজিৎ এর ছবিতে সেই চিত্র বারবার ফুটে উটেছে।

এবারের উৎসবে সত্যজিৎ রায় স্বারক বক্তিতা দিয়েছেন সুধীর মিশ্র। তিনি তার ভাষণে বলেন যে সময় সত্যজিৎ রায় ছবি বানিয়েছেন সেই সময় সাদা কালো ছবি, নেই কোনো টেকনোলজি। অথচ তিনি অনেক নতুন চিন্তা ভাবনায় ছবি করেছেন। নতুন দের সুযোগ দিয়েছেন। নিজে ক্যামেরা করেছেন অনেক সময় এমন কি শর্ট নেবার পর ভালো না লাগল আবার নতুন করে নিয়েছেন। সেই সময়ের আধুনিকতার উত্তরসূরি ছিলেন সত্যজিৎ রায়।

এবার উৎসবে আমন্ত্রিত হয়ে এসেছিলেন অভিনেতা নীরজ কবি। বাংলা একাডেমি তে তিনি শোনালেন তার অভিনয় জীবনের কথা। তিনি থিয়েটার করেছেন, মঞ্চ থেকে অভিনয় তারপর পর্দা সব মিলিয়ে এক বিচিত্র জীবন তার। নতুন অভিনেতা অভিনেত্রী দের বলেন একমাত্র মঞ্চ নাটক ই হলো অভিনয়ের আসল শিক্ষা।

এবার চলে আসা যাক মুক্ত মঞ্চের আড্ডায়। প্রথমদিনের আড্ডার বিষয় ছিলো চরিত্র না তারকা। আলোচনায় অংশ নেয় প্রসেনজিৎ, রাজ চক্রবর্তী, অনির্বাণ ভট্টাচার্য, বনি সেনগুপ্ত, কৌসানি মুখোপাধ্যায়, ইশা সাহা ও বাংলাদেশ এর বিখ্যাত অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী ও অভিনেত্রী নাফিসা টুসি। সঞ্চালনায় ছিলেন সৌরভ দাস। আলোচনায় এটাই সবাই এক কথায় বলেন চরিত্র ই তারকা বানায়।কারণ কোনো পরিচালক কোনো অভিনেতা অভিনেত্রী কে সেটা মঞ্চ হোক বা পর্দায় সেখানে সেই চরিত্র করেই সে স্টার হয়। চরিত্র না পেলে স্টার হবে কি করে?? দ্বিতীয়দিন এক তারা মঞ্চের আড্ডার বিষয় ছিলো সুর আগে না গায়ক। আলোচনায় অংশ নেয় হৈমন্তী শুক্লা, সুরজিৎ চট্টোপাধ্যায়, লগ্নজিতা চক্রবর্তী, রনজয় ভট্টাচার্য, অন্বেষা, অর্ক।
সঞ্চালনায় ছিলেন অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়। অনেকেই বলেন সুর না হলে গান তৈরি হবে না আবার গান না হিট হলে গায়ক ও জনপ্রিয় হবে না, তবে কেউ কেউ মনে করেন গীতিকার ও সুরকার জুটি যেমন নতুন গানের জন্ম দেয় তেমন একজন শিল্পীর কণ্ঠ গান কে আলাদা মাত্রা দেয়। অতএব সবাই সবার পরিপূরক। তৃতীয়দিন এর আড্ডার বিষয় ছিলো সমালোচক না বক্স অফিস। ছিলেন হরনাথ চক্রবর্তী, অরিন্দম শীল, সুব্রত সেন থেকে দৈনিক পেপার এর কিছু সাংবাদিক। ছবি যদি দেখে ভালো না লাগে যে কোনো সাংবাদিক সমালোচনা করতেই পারেন। সেটা তার অধিকারের মধ্যে পরে। কিন্তু পরিচালক দের সেখানেই রাগ। ভালো লিখলে ব্যাবসা হবে খারাপ লিখলে লস। কিন্তু ছবির দর্শক কি শেষ কথা বলবে। সমালোচক নয়! চতুর্থ দিনের আড্ডার বিষয় ছিলো হাস্য কৌতুক কি শারীরিক ভঙ্গিমা না টাইমিং। ছিলেন কাঞ্চন মল্লিক, বিশ্বনাথ বসু, খরাজ মুখোপাধ্যায়, পার্থ সারথি, অনির্বাণ চক্রবর্তী, বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী। এক দারুন আলোচনা হয় এই আড্ডায়। কাঞ্চন ও বিশ্বনাথ রাস্তায় খেয়াল রাখে কে কেমন ভাবে যায়,মন্দিরে প্রণাম করেন, প্রতিটা মানুষের চলা ফেরা ও যেন একটা কমেডি চরিত্র। সব মিলিয়ে জমে উটেছিল এই আড্ডা, মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন এইদিন উৎসব চেয়ারম্যান রাজ চক্রবর্তী, মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন, অরূপ বিশ্বাস, বির বাহ হাসদা।উৎসবের শেষ দিন আড্ডার আলোচনার বিষয় ছিলো নতুন যুগের চলচ্চিত্রের ভাষা। অংশ নেয় প্রসূন চট্টোপাধ্যায়, মানস মুকুল পাল, অনির্বাণ ভট্টাচার্য, সৃজিত মুখোপাধ্যায়, রাজ চক্রবর্তী, অরিন্দম শীল। তাদের আলোচনায় উঠে আসে দোস্তজি বল্লভ পুরের রূপকথা ও সহজ পাঠের গপ্পো। এই রকম নানা আড্ডার সাক্ষী থাকলাম আমরা এবারের ২৮ তম আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে। প্রতিদিন ছিলো মিডিয়া সেন্টারে নানা ছবি নিয়ে সাংবাদিক দের মুখোমুখি আলোচনা ও প্রশ্ন উত্তর পর্ব। নন্দন, রবীন্দ্র সদনে হাজার হাজার মানুষের ভিড় প্রমাণ করে কলকাতা আছে কলকাতাতেই। উৎসবের শহর এই কলকাতা যেখানে শিল্পী থেকে পরিচালক, প্রযোজক থেকে দর্শক সকলেই মিলেমিশে একাকার। সব মিলিয়ে এই বছরের ২৮ তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব সিনেমা প্রেমীদের মনের অন্তরে জায়গা করে নিতে পেরেছে বলে আমার বিশ্বাস।

Copyright © 2022 Rupkatha Live. All Rights Reserved. Powered by : Technotrick Systems.