গল্প

গল্প অবিশ্বাসী মন

অবিশ্বাসী মন

লেখক : গৌতম মুখোপাধ্যায়

দিন পনেরোও বাকি নেই দুর্গাপূজার নীল আকাশে কোথায় সাদা মেঘ পাল তুলে স্বপ্ণরাজ্যে পাড়ি দেবে-তা নয়তো, ঘন কালো মেঘে আকাশ ঢাকা, এক নাগাড়ে বৃষ্টি হয়ে চলেছে---মাঠে জল জমায় পূজার প্যান্ডেল একপাশে হেলে গেছে৷ যেদিকে বরুণ দেবের দৃষ্টি নেই, বৃষ্টি দিয়েই চলেছে, বৃষ্টি বলতে কিন্তু ঝিরঝিরে বৃষ্টি নয়, একেবারে মুশলধারে বৃষ্টি৷ পূজার আগেই বানভাসি হল বলে৷

মেসের পাঁচনম্বর ঘরে বসে খোলা জানালা দিয়ে গঙ্গার দিকে তাকিয়ে বৃষ্টির নৃপূরধ্বনিতে মগ্ণ হয়েছিল জয়ন্ত৷ ফুলেশ্বরে একেবারে গঙ্গার কাছে জয়ন্তর মেস৷ সবশুদ্ধ দশটা ঘর৷ প্রত্যেক ঘরের লাগোয়া একফালি জায়গা কোমর সমান পাঁচিল দেওয়া আছে ইটের৷ যদি কোনও মেসবাসী সপাকে থাকতে চায় তার জন্য এ ব্যবস্থা৷ বিস্তর মেসের প্রত্যেকেই দু বেলা হোটেল থেকে খাবার খেয়ে আসে৷ অবিবাহিত থাকায় এটা সুবিধা হয়েছে৷ মেসের প্রত্যেক ঘরে দুজন করে থাকার ব্যবস্থা আছে৷ এবার কেউ যদি মনে করে যে একা থাকবে তবে তাকে অপর জনের ভাড়া গুণতে হবে৷ অনেকের পক্ষেই সেটা বেশ কষ্টের৷ তাই মেসের ঘরের বেশিরভাগ ভাড়াটিয়া নিজের তাগিদে একজন করে ভাড়াটে জোগাড় করে এনেছে৷ এদের মধ্যে একমাত্র ব্যতিক্রমী জয়ন্ত৷---একটু বেশি ভাড়া গুণতে হয় বললে কি হবে--- নিজের মতো করে থাকাতো যাবে৷ ব্যক্তিগত প্রয়োজনে সময়ের হেরফের হলে কারও কাছে কৈফিয়ত দাখিল করতে হবে না৷ অতএব ঘরে একাই থেকে গেছে জয়ন্ত৷

সকাল দশটা নাগাদ পত্রিকার সম্পাদকের ফোন---ফোনের আওয়াজ কানে আসতেই জয়ন্তর মেজাজ যায় বিগড়ে, অনুভবের জগৎ থেকে বিচ্ছিন্ন হতে হয় বলে৷ অন্য কারও ফোন হলে সে ধরত না, কিন্তু এতবড় একটা পত্রিকার সম্পাদকের ফোন, না রিসিভ খুব খারাপ দেখায়৷ তাই মনের বিরুদ্ধে ফোন রিসিভ করে জয়ন্ত, বলুন দাদা? কি প্রয়োজন বলুন?

কোনও ভনিতা না করেই সম্পাদক বলতে শুরু করেন---আমাদের পরবর্তী সংখ্যা ভূতপ্রেত-রাক্ষস-খোক্ষস-এর উপর ভিত্তি করে হবে, তাছাড়া সংখ্যাটা আমরা স্পেশাল করতে চাই৷ দুবছর আগের ভূত সংখ্যাটা পাঠকদের কাছে খুবই জনপ্রিয় হয়েছিল, এমনকি রি-প্রিন্টও করতে হয়েছিল৷ সবটাই নির্ভর করেছিল আপনাদের মতো জনপ্রিয় লেখকদের লেখনীতে৷ তাই এবছর এই স্পেশাল সংখ্যার জন্য আপনাকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি একটি গল্প দেবার জন্য৷ আশা করব আমাদের অনুরোধটা রাখবেন৷

---কিন্তু...

জয়ন্তকে বলতে না দিয়ে সম্পাদক বলে চলে---তাহলে ওই কথাই রইল, দিন দশেক পর আমার লোক গিয়ে আপনার থেকে লেখাটা নিয়ে আসবে৷ ঠিক আছে৷ এখন তাহলে রাখি৷ নমস্কার৷ ফোনটা কেটে যায়৷ ফোনটা হাতে ধরা অবস্থাতেই জয়ন্ত বলে ওঠে---এ কি রে বাবা? উনি একাই বলে গেলেন, আমার কথা শুনলেনই না! আমারও তো কিছু বলার থাকতে পারে, উঃ! কথার মধ্যে বিরক্তির ভাব লক্ষ করা যায়৷

দুবছর আগেও ঠিক একই ব্যাপার ঘটেছিল, জোর করে তাকে দিয়ে লিখিয়ে নিয়ে ছিল ভূতের গল্প৷ ৷ মন থেকে থাকে মানে না, যেটা তার কাছে অস্তিত্বহীন; তাকে নিয়ে গল্প লেখা---মনের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা৷ তবুও সম্পাদকের অনুরোধে এবং নবীন পাঠকদের ইচ্ছাকে সম্মান জানাতে তাকে লিখতেই হয়েছিল ভূতের গল্প৷ গল্পটা পাঠকদের কাছে খুব জনপ্রিয়ও হয়েছিল৷ পাঠকদের কাছে জনপ্রিয় হওয়া সত্ত্বেও, তারপর সে স্থির সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে আর যাই গল্প লিখুক, ভূতের গল্প লিখবে না৷

কিন্তু এ বছর সেই একই অবস্থা৷ মনের বিরুদ্ধে গিয়েও তাকে গল্প লিখতে হবে৷ তাতে গল্পে প্রাণ থাক্‌ বা না থাক৷ পাঠকদের মনে তুমি যদি একবার দাগ কেটে ফেলেছ তাহলে পাঠকদের ভালোবাসাই তোমার গল্পে প্রাণ ফিরিয়ে আনবে৷ তুমি অসাধ্য সাধন করে ফেলতে পার৷

বৃষ্টি থামার লক্ষণ নেই দেখে জয়ন্ত মনস্থির করে নেয় আজ আর বাজারে বের হবে না, ঘরে যা আনাজপাতি আছে তা দিয়ে খিচুড়ি বানিয়ে নেবে৷

এদিকে যত বেলা বাড়ছে বৃষ্টির দাপটও তত বৃদ্ধি পাচ্ছে৷ সকালের দিকে ঝোড়ো হাওয়া ততটা ছিল না, কিন্তু এখন বৃষ্টির দোসর হয়েছে ঝোড়ো হাওয়া৷ জয়ন্ত আর জানালা খোলা৷ রাখতে পারে না, সকাল থেকে বৃষ্টিস্নাত প্রকৃতিকে দেখতে গিয়ে জলের ঝাপটায় ঘরের মেঝে জলে ভেসে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল৷ বিছানায় চাদর দিয়ে অনেক কষ্টে মেঝে মুছেছে৷ তারপর থেকে সেই যে জানালা বন্ধ করেছে, দুপুরেও আর জানালা খোলার ইচছা প্রকাশ করেনি৷

খাওয়া দাওয়ার বাসনপত্র মেজে যখন বিছানায় শুতে যায় তখন ঘড়িতে দুটো৷ শুতে যাবার আগে---সে দুপুরেই হোক বা রাত্রেই হোক বইপড়ার অভ্যাস ছোটোবেলা থেকেই আছে৷ বই না পড়লে ঘুম আসে না৷ সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায়ের ‘পোড়ো বাড়ির শিব’ গল্পটি পড়তে-পড়তে কখন ঘুমিয়ে পড়েছে হুঁশ ছিল না৷ দরজার কড়া নাড়ার শব্দে ঘুম ভেঙে যায়৷ একরাশ বিরক্তি নিয়ে দরজা খোলে৷ ---তুই? এই বৃষ্টিতে? তোর কি মাথা খারাপ হয়েছে? বইরের লোক যখন কি করে ঘরে ফিরবে---সেই চিন্তা করছে, আর তুই? বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়লি? একদিন যদি পড়া কামাই-ই হতো? তাতে কি মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যেত? তুই কি পড়া কামাই করিস না?

---স্যার আগে ঘরে ঢুকতে দিন, ভিজে কাঁপ ধরে গেছে৷

---আয়, আয়৷ সত্যি তো, তোকে ভিতরে আসতে না বলে বকা দিয়েই যাচ্ছি, আমারও মাথার ঠিক নেই, আয়৷

বিনয় ছাতাটা দালানে মেলে দিয়ে ঘরে প্রবেশ করে৷ কাঁধের ব্যাগটা দেওয়াল ধারে রেখে বলে---স্যার মাথাটা মুছব একটা কিছু দেবেন?

জয়ন্ত শুকনো তোয়ালেটা বিনয়ের হাতে ধরিয়ে দেয়৷

---নে ভালো করে হাত-পা মুছেনে৷ আমি খাতাগুলো নিয়ে আসি৷

---স্যার, আজকে নোট লিখতে ভালো লাগছে না৷ কিছু একটা পড়ান না৷ সবাই যেদিন আসবে---সেদিন লেখাবেন? আজ একটু পড়ান না স্যার?

---তোদের না পড়িয়ে-না বুঝিয়ে কিছু লিখিয়েছি? আজও তাই করব, পড়িয়ে নোটটা লেখাব৷ ওইজন্য খাতাগুলো আনতে যাচ্ছি৷ তুই বস! ---আলমারি থেকে খাতাগুলো বের করে জয়ন্ত--- আজকে একটা ভালো টপিক পড়াব৷

---কি টপিক স্যার?

---রবীন্দ্র সাহিত্যে কালীদাসের প্রভাব৷ বর্ষাকাল দুজনেরই প্রিয় ঋতু, যদি এটা বর্ষাকাল নয়, তবুও যেভাবে বৃষ্টি হয়ে চলেছে, তাতে বর্ষাকালও লজ্জা পেয়ে যাবে৷ দ্যাখ না বৃষ্টির দাপট কিরকম বেড়ে চলেছে? ---হ্যাঁরে বিনয় তুই এলি কি করে? রাস্তায় গাড়ি-টাড়ি কিছু চলছে?

---হ্যাঁ চলছে, কিন্তু খুবই কম৷

---তাহলে আজ বেশি পড়তে হবে না--- বাড়ি চলে যাবি৷ নোটটা ভালো করে বুঝেনে? পরের দিন লেখাব?

---ঠিক আছে স্যার৷

জয়ন্ত সবেমাত্র কিছুটা বুঝিয়েছে হঠাৎ-ই বিনয় প্রশ্ণ করে বসে---আচছা স্যার আপনি ভূত বিশ্বাস করেন?

---এই টপিকের সঙ্গে তোর কথার মিল কোথায়? এটা তো একটা উদ্ভট প্রশ্ণ৷ আমি বিশ্বাস করি? আর নাই করি---তাতে তোর কিছু এসে যাবে কি?

---আমি কিন্তু স্যার বিশ্বাস করি৷

---তোর বিশ্বাস তোর কাছে রাখ? অপরের ওপর চাপাস কেন? মনে -মনে কি একটা ভেবে নিয়ে জয়ন্ত জিজ্ঞাসা করে---তোর কি মনে হয় ভূত বলে কিছু আছে?

---অবশ্যই৷ ভূত, অশরীরী আত্মা সবই আছে৷ আমার কথাই ধরুন না---পড়ে ফিরতে ফিরতে যেদিন রাত হয়ে যায়, লোডশেডিং থাকে৷ আমাদের ওদিকটা একদম ফাঁকা, জনবসতি নেই বললেই চলে৷ খুব ভয় লাগে, তখন আমার পিছু পিছু আমার বাবা আসে৷ আমি স্পষ্ট বুঝতে পারি৷ যতক্ষণ না মাকে দেখতে পাই, ততক্ষণ পর্যন্ত বাবা আমার সঙ্গে সঙ্গে আসে৷

---এটা আবার হয় নাকি?

---হ্যাঁ স্যার৷ আপনাকে মিথ্যা বলে লাভ কি?

---কথাটা তোর মা জানে?

হ্যাঁ৷ একটা দীর্ঘ নিশ্বাস পড়ে বিনয়ের৷

নোটের খাতাটা মুড়ে অবাক বিস্ময়ে বিনয়ের দিকে চেয়ে থাকে৷

স্যারকে চুপ থাকতে দেখে বিনয় বলে---এই দেখুন না স্যার৷ আজকেই এই বৃষ্টির মধ্যে একা আসতে দিল না, মা বলল আমি তোর সঙ্গে যাব৷

---এই বৃষ্টির মধ্যে তোর মাও তোর সঙ্গে বেরিয়েছে? কোথায় উনি?

---ওই যে স্যার স্ট্যান্ডে যে মিষ্টির দোকান আছে, ওখানে বসে আছে৷

---ওখানে বসে আছেন কেন? বাড়িতে নিয়ে আসবি তো? তোর ঘটে কি বুদ্ধি বলে কিছু নেই?

---আসলে কি বলুন তো স্যার৷ পড়ার কাছে গার্জেনরা বসে থাকলে পড়তে কিরকম লাগে৷ পড়ায় ঠিক মন বসাতে পারি না৷

---সেটা ঠিক আছে, কিন্তু আজকের পরিস্থিতিটা অন্যরকম৷ আজকে আনতে পারতিস্‌?

---মাকে বলা আছে স্যার, দেরি হলে একটু এগিয়ে আসতে৷

---খুব ভালো করেছিস৷

একনাগাড়ে মিনিট পনেরো টপিকটা বোঝানোর পর জয়ন্ত জিজ্ঞাসা করে---তোকে খুব অন্যমনস্ক লাগছে৷ মনে হচ্ছে টপিকটা তুই মন দিয়ে শুনছিস না৷ তুই অন্য কিছু চিন্তা করছিস৷ পড়তে এসে যদি অত চিন্তা করিস, তবে পড়তে এলি কেন?

বিনয় নিরুত্তর থাকে৷

পড়ার প্রসঙ্গের বাইরে গিয়ে জয়ন্ত বলে---একটা জিনিস লক্ষ করেছিস বিনয়?

এত বৃষ্টির মধ্যেও কারেন্টটা কিন্তু ঠিক আছে৷ কারেন্ট চলে গেলে কিন্তু আর পড়াতে পারব না৷ কেননা মোমবাতির আলোকে আমি পড়াতে পারব না৷

---ঠিক-ই বলেছেন স্যার৷

জয়ন্তর মুখের কথাটা শেষ হতে না হতে কারেন্ট চলে যায়৷

---দেখলি বিনয়? শুধু একটু ভদ্রলোকের প্রশংসা, ব্যস্‌...

---ঠিক আছে স্যার৷ আমার মাও মনে হয় এসে গেছে৷

---তুই জানলি কি করে?

---ওই তো স্যার? দরজার দিকে আঙুল দিয়ে দেখাতে ভেজানো দরজাটা হাট করে খুলে যায়; অপরাহ্ণের অল্প আলোয় দেখা যায়---মেয়ের বারান্দা থেকে কিছুটা দূরে ছাতা মাথায় দিয়ে একজন মহিলা দাঁড়িয়ে রয়েছেন৷
---হ্যাঁরে বিনয় দরজাটা কি করে খুলল? আমি তো ছিটকানি দিয়েই বসলাম৷ তবে...

---বাইরে কিরকম হাওয়া চালাচ্ছে দেখুন না৷ ছিটকানিটা হয়তো ঠিকমতো দেওয়া হয়নি৷

---জয়ন্ত মাথা চুলকে বলে---তা হবে বোধ হয়৷

---ঠিক আছে তুই আয়৷ বাইরে তোর মা অনেকক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে আছে৷ ব্যাগটা নিয়ে উঠে পড়ে বিনয়৷ খোলা দরজা দিয়ে এক দৌড়ে বাইরে দাঁড়ানো মহিলার কাছে উপস্থিত হয়৷ বিনয়ের পিছন-পিছন জয়ন্তও উঠে আসে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বলে--- কিরে ছাতাটা নিলি না? ভিজে যাবি যে!

---পরের দিন এসে নিয়ে যাব স্যার৷ একই ছাতায় এগিয়ে যায় দুজনে৷ ক্রমশ দৃষ্টিপথের বাইরে চলে যায়৷

---পাগল কাকে বলে? মনে মনে কথাগুলো বলে জয়ন্ত৷

দরজার ছিটকানিটা ভালো করে দিয়ে সবেমাত্র মোমবাতিটা জ্বালার জন্য দেশলাইটা টেবিল থেকে নিতে যাবে, এমন সময় মোবাইলটা বেজে ওঠে৷ বাজুকগে, আগে মোমবাতিটা জ্বালি-পরে ফোন ধরা যাবে৷ কয়েকবার রিং হয়ে ফোনটা কেটে যায় জ্বলন্ত মোমবাতিটা টেবিলে রেখে মোবাইলটা হাতে তুলে নেয় জয়ন্ত৷ দেখে একটা অপরিচিত একটা নাম্বার৷ অচেনা নাম্বার দেখে রিং ব্যাক করার ইচ্ছা করে না জয়ন্তর৷ ফোনটা হাতে ধরাই থাকে, মনে মনে ভাবে এরপর ফোন এলে তখন দেখা যাবে৷ দরজার দিকে এগিয়ে যায় এই ভেবে যে, বাইরে যেভাবে বৃষ্টির সঙ্গে ঝড়ের দাপট বেড়ে চলেছে তাতে দরজায় খিল দিয়ে দেওয়াই ভাবে ছিটকানির ওপর ভরসা করা ঠিক হবে না৷ দরজার খিলে সবেমাত্র হাত দিযেছে৷ ঠিক সেই সময়ে একই সঙ্গে মোবাইল বেজে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে দরজার পাল্লায় ঠক্‌ ঠক্‌ শব্দ শোনা যায়৷ ফোনটা কানে ধরে বলে---হ্যালো, কে বলছেন?

অপর প্রান্ত থেকে প্রকাশের কণ্ঠ ভেসে আসে---স্যার শুনেছেন? আজ দুপুরে বিনয় আর ওর মা বাসে করে আমতা যাচিছল৷ হঠাৎ বাসটা ব্রেক ফেল করে এক নম্বর পোলের কাছে কানা দামোদরে পড়ে যায়৷ বেশিরভাগ জনকে বাঁচানো গেলেও ওদের দুজনকে বাঁচানো যায় না৷ এইসবে দুজনকে গাড়িতে তুলছে---ওখান থেকেই স্যার ফোন করছি৷ ওই গাড়ির পিছন-পিছন আমরাও কয়েকজন যাব বলে রেডি হচ্ছি৷ স্যার আমাদের ডাকছে, আপনাকে পরে ফোন করব৷ রাখছি স্যার৷ ফোনটা কেটে যায়৷

জয়ন্তর মুখ দিয়ে কোনও শব্দ বের হয় না, ফোনটা হাতে ধরাই থাকে৷ ওদিকে দরজার পাল্লায় ঠকা-ঠক শব্দ হয়েই চলেছে৷ ছিটকানিটা খুলতে গিয়ে জয়ন্তর মতো ভূত অবিশ্বাসী মানুষেরও মনে একটা চাপা উত্তেজনার সৃষ্টি হয়৷ দ্বিধা কম্পিত চিত্তে দরজার ছিটকানিটা খোলে৷ দেখে দরজার সামনে বিনয়ও একটু আগে বিনয়ের সঙ্গে থাকা সেই মহিলা৷

---স্যার চিনতে পারছেন? এই যে আমি আর আমার মা৷

মোমবাতির মৃদু আলোয় দুটো আবছা মূর্তি৷

---তু... মুখ দিয়ে একটা অস্পষ্ট আওয়াজ বের হয়৷ দমকা হাওয়ায় দরজার পাল্লা সজোরে বন্ধ হয়ে যায়৷ দরজার ভিতর দিকে স্নানুর মতো দাঁড়িয়ে থাকে জয়ন্ত৷

Copyright © 2022 Rupkatha Live. All Rights Reserved. Powered by : Technotrick Systems.