গল্প

গল্প ফুলবনির মানুষজন

ফুলবনির মানুষজন

লেখক : অমর মিত্র

মনীশ বলল, কাকাকে নাকি দাদুর মতোই দেখতে!
মৃণাল বলল, ছবি দেখলে কিছু বোঝা যায় না দাদা৷
কাকা এত বড় আঘাত পেল, খুব চেষ্টা করলাম, হলো না৷ বিড়বিড় করল মনীশ৷
মৃণাল থাকে জামশেদপুর৷ তার মেয়ে এবার মেডিকেলে চান্স পেয়েছে৷ কলকাতায় একটা আস্তানা করবে সে, এই রকম নানা কথা ভাবছে৷ মেয়ে থাকবে হস্টেলে৷ তাকেও তো যেতে হবে মাঝেমধ্যে৷ চাকরির আর তিন বছর আছে, আত্মীয়স্বজন সব কলকাতা আর মেদিনীপুর এবং এই ফুলবনি৷ অনেকদিন সে ফুলবনি ছাড়া৷ কিন্তু তার একটি আস্তানা আছে এখানে৷ মেজদার কাছে চাবি৷ মেজদা, বড়দা, আর ছোড়দা এখানে থাকে৷ আর থাকে মেজকার তিন ছেলে৷ ছোট কাকা৷ ছোট কাকি নেই৷ অন্য দুই কাকিমা বেঁচে৷ কত বড় পরিবার, ফুলবনিতে এই বৈশাখ মাসে লু বয়৷ বাতাসে আগুনের ঢেউ থাকে৷ কিন্তু গত কয়েকদিন এক টুকরো মেঘ এসে ঘুরে বেড়াচ্ছে৷ দূরে জঙ্গল পেরিয়ে লালগড়ের দিকে নাকি পরশু নামিয়েছে এক পশলা৷ লালগড়ে তাদের এক পিসি থাকেন এবং বেশ সুস্থই আছেন৷ এসেছেন৷ এসে খুব কাঁদলেন৷ নিজের বাবার ছবির সমুখে গিয়ে বললেন, নিলুকে তুমি টেনে নিলে বাবা?

নিলু ছোট কাকার ছেলে৷ সদ্য প্রয়াত৷ কাকা একেবারে একা হয়ে গেলেন৷ তাঁর অন্য ছেলে বিলু থাকে বহরমপুর৷ কাকা বেশ লম্বা মানুষ৷ কৃষ্ণকায়৷ সাদা পাঞ্জাবি পায়জামা পরেন৷ মাথার চুল কাঁচা পাকা৷ স্তম্ভিত হয়ে বসে আছেন৷ এখন বিকেল৷ শ্রাদ্ধের কাজ শেষ৷ নিলুর মেয়ে অন্বেষা মেদিনীপুর হাই ইসুকলের টিচার৷ গত বছর চাকরি পেয়েছে৷ বিয়ে হয়নি এখনো৷ নিলুর ছেলে সূর্য সেকেন্ড ইয়ার৷ বাংলা অনার্স৷ কবিতা লেখে নাকি গোপনে৷ এই নিয়ে খুব চিন্তা ছিল নিলুর৷ তাদের ফ্যামিলিতে কেউ কি কবিতা লিখেছে কখনো? ফিজিক্স অনার্স ছেড়ে বাংলা নিল৷ মনীশ দেখল মুণ্ডিত মস্তক সূর্য তার দাদুর সামনে চেয়ার টেনে এনে বসল৷ চুপ করে আছে৷

মৃণাল ঝুঁকে এল, কী হয়েছিল দাদা, হঠাৎ, ভাবতেই পারিনি৷
হাই প্রেশার ছিল, ফার্মেসি করেছিল, অথচ নিজেকে চেক আপ করাত না৷
মৃণাল আর নিলু প্রায় এক বয়সি৷ নিলু খুব সাহসী৷ ডানপিটে৷ মৃণাল ছিল নিলুর অনুগত৷ নিলু মাঝখানে খুব ঝামেলা পুইয়েছে৷ শুনেছিল মৃণাল৷ একবার ফোন করেছিল তখন৷ নিলু বলেছিল তার কাছে মাসে দশ হাজার টাকা দাবি করেছিল উগ্রপন্থীরা৷ সম্ভব! সে লালগড় গিয়েছিল পিসির নাতির অন্নপ্রাশনে৷ তাকে ধরে গাছের সঙ্গে বেঁধে টাকা দাবি করেছিল তারা৷ আসলে হয়তো পার্টিই নয়৷ পার্টির নামে টাকা আদায়৷ অনেক দরাদরির পর পাঁচ হাজার দিয়ে ছাড়া পেয়েছিল৷ ফুলবনিতে ফিরে পাঁচ দিয়েছিল তাদের লোকের হাতে৷ তারা মনে হয় আরও দূরের, ভোলাভেদা কিংবা পূর্ণাপানির লোক৷ সেই সময়টায় একা নিজেকে রক্ষা করেছিল নিলু৷ কেউ তার পাশে দাঁড়ায়নি৷ কিন্তু যখন সুসময় এল, হুট করে চলে গেল৷ খুব চেষ্টা করা হয়েছিল বাঁচানোর৷ কলকাতা নিয়ে গিয়েছিল মনীশ৷ ফুলবনির অনেকেই নিলুর জন্য কষ্ট পেয়েছে৷ মনীশরা বডি নিয়ে যেদিন ফেরে, রাত বারোটার উপর হয়ে গিয়েছিল৷ তখন কত লোক৷ সেদিন সন্ধ্যায় খুব ঝড় হয়েছিল৷ বাতাসের কী রোষ! কী রাগ! সমস্ত ক্ষোভ যেন উগরে দিচ্ছিল৷ তাদের গাড়ি তখন হাইওয়ের উপর৷ মনীশ বলতে বলতে চুপ করে যায়৷ উঠে পড়ে৷

কাকার দিকে এগোয় মনীশ৷ খেয়েছেন কি?নিলু তাদের সকলের চেয়ে ছোট৷ পঞ্চাশ হয়েছে সবে৷ বেশিদূর লেখাপড়া করতে পারেনি৷ ব্যবসা করত৷ ব্যবসা এখন কে দেখবে?সূর্য নিতান্তই নাবালক৷ কাকা সাতাত্তর৷ কাকাকে দেখতে হবে ওষুধের দোকান৷ মনীশ বলল, কাকা একটু শুয়ে নিতে পারতেন?

কেন? তিনি মুখ তুললেন৷
মনীশ কিছু বলতে পারে না৷ এই বিঘে খানেক জমিতে সাতটি দালান৷ পুরোনো লম্বা দালান বাড়িটিও রয়েছে৷ ওই বাড়িটি মনীশের ঠাকুরদা গুরুদাস চন্দ্র করেছিলেন বছর ষাটেক আগে৷ তার আগে ওখানে মাটির ঘর ছিল৷ হাওড়ার সালকিয়ার মানুষ গুরুদাস এখানে এসেছিলেন ১৩৪৮ বঙ্গাব্দে৷ ১৯৪১৷ ওই বছর ২২ শ্রাবণ রবীন্দ্রনাথের প্রয়াণ৷ তখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলছে৷ কী অদ্ভুত মানুষ ছিলেন তাদের ঠাকুরদা৷ মনীশ যখন দেখেছে তাঁকে, তিনি শয্যাশায়ী৷ পক্ষাঘাতে একটা দিক পড়ে গিয়েছিল৷ জড়িয়ে কথা বলতেন৷ জিজ্ঞেস করতেন, ও মনু, আজ কি পুন্নিমে হলো? কতবার জিজ্ঞেস করতেন৷ উত্তর পেলে ভুলতে সময় লাগত না৷ আজ সেই পূর্ণিমা৷ আজ তাঁর পৌত্রের পারলৌকিক কাজ হলো৷ গুরুদাসের শেষ সন্তান অবিনাশ৷ সমস্তদিন চুপচাপ৷ এখন বললেন, আমার কীরে, আমার দিন তো শেষ হয়ে গেছে, কত দেখতে হবে জানিনে৷

সূর্য বলল, দাদু তুমি রেস্ট নাও৷
অবিনাশ বললেন, তুই তোর মার কাছে যা৷
সূর্য বসেই থাকল৷ তার মা একা নেই৷ অনেকেই ঘিরে আছে তাঁকে৷ মনীশ চেয়ার টেনে বসল৷ বিষ্ণুপুরের বোন এসে বলল, কাকা যাই, ট্রেন ধরব৷

ঘাড় কাত করলেন অবিনাশ৷ তারপর কী মনে হতে বললেন, কাল সকালের ট্রেন ধরিস, আজ থেকে যা, আজ তো বুদ্ধ পূর্ণিমা, পূর্ণিমা না?

তাই কী হয়েছে?

পূর্ণিমার দিনে সবাইকে সন্ধের পর বাড়ি থাকতে হতো, মনে আছে?

মল্লিকা বিমর্ষ মুখে হাসে, বলে, জানি, সে সব দিন আর ফিরে আসবে না৷

আজ পূর্ণিমা, আজ যেতে নেই৷

মল্লিকা তার ছেলের দিকে তাকান৷ ছেলের সঙ্গে এসেছেন৷ ছেলে বলল, ফিরতে হবে দাদু৷

না, আজ পূর্ণিমা, বাড়িতে তোর বাবা আছে তো৷

হ্যাঁ৷
আর এক ভাই আছে তো?

হ্যাঁ৷ মল্লিকার ছেলে অভিষেক ঘাড় কাত করল৷

তাহলে আজ না গেলে কী হবে?

মল্লিকা চোখে আঁচল দিল, ঠিক আছে কাকা থাকলাম৷

কাকা আবার চুপ৷ মৃণাল এসে বসে৷ মৃণাল ভোরে রওনা দেবে৷ ঝাড়গ্রাম যাবে৷ ঝাড়গ্রামে ওর শ্বশুরবাড়ি৷ ঝাড়গ্রাম থেকে কলকাতা যাবে দুদিন বাদে৷ মনীশ এখানে থাকে৷ ভেবেছিল কদিন দার্জিলিং ঘুরে আসবে৷ টিকিট কাটা ছিল৷ ক্যান্সেল করেছে৷ কাকাকে রেখে যাবে না৷ ঠিক হবে না৷ কাকা তাঁর নাতি সূর্যকে জিজ্ঞেস করলেন, বাবার জন্য কষ্ট হচ্ছে?

সূর্য চুপ করে থাকে৷ কাকা ডাকলেন, আয়, কাছে আয়৷

সূর্য চেয়ার নিয়ে সরে যেতে কাকা তার পিঠে হাত রাখলেন, বললেন, তুই কবিতা লিখিস, তা নিয়ে তোর বাবার খুব চিন্তা ছিল৷

সূর্যর চোখ আর্দ্র হয়ে ওঠে৷ বছর কুড়ির সদ্য যুবক নিজেকে সামলায়৷ বলল, আমাদের প্রপিতামহ তো কবি ছিলেন দাদু?

কই না তো৷ বিস্মিত হলেন অবিনাশ, কে বলল?

আমার মনে হয় দাদু৷

অবিনাশ বললেন, তুই তাঁর কথা জানিস, স্বর্গীয় গুরুদাস চন্দ্রের কথা?

জানি৷
কী জানিস?
তুমি বল না দাদু৷
মৃণালের মনে হয় কাকা আর তার ভাইপো দুজনে অদ্ভুত এক আলাপ করছে৷ নীলুর কথা বলছে না৷ যাঁর কথা বলছে তাঁকে দেখেনি সূর্য৷ তিনি সেই ১৯৪১-এ চার ছেলে আর দুই মেয়েকে নিয়ে নিরুদ্দেশ যাত্রা করেছিলেন৷ মৃণাল জিজ্ঞেস করল, তোকে তোর বাবা বলেছিল আমাদের ঠাকুরদার কথা?

মাথা নাড়ে সূর্য৷ তবে কে?সূর্য হাত বাড়িয়ে নিজের দাদুকে ছোঁয়৷ অবিনাশ অবাক হয়ে মুণ্ডিত মস্তক পৌত্রকে দেখছেন৷ তিনি বলেছিলেন? মনে পড়ে না৷ কিন্তু বলার দরকার ছিল৷ জানা দরকার ওর৷ ও তো অন্যরকম জীবনের কথা ভাবতে আরম্ভ করেছে যা নীলুর চিন্তার বিষয় হয়ে উঠেছিল৷ ছেলেটার মুখের ভিতরে চোখের চাহনিতে কি তাঁর বাবার মুখের ছায়া পড়েছে? গুরুদাস চন্দ্র আর কবছর বাদে যাত্রা করবেন প্রায় নিরুদ্দেশে৷ সালকিয়াতে পড়ে থাকল তাঁর স্বজন-পরিজন, অন্য ভাইরা৷

দুই


বাংলা সন ১৩৪৮, ইংরেজি ১৯৪১, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলছে৷ কদিন বাদেই রবীন্দ্রনাথের প্রয়াণ হবে৷ গুরুদাস চিঠি পেয়েছিলেন ফুলবনির৷ ফুলবনি মেদিনীপুর জেলায়৷ অনেক দূর৷ তাঁর জেঠতুতো বোনের বিয়ে হয়েছিল সেখানে৷ এই বোনটিকে তিনি চিঠি লিখেছিলেন,

স্নেহের রমলা,

আশা করি সর্ব বিষয়ে কুশল৷ আমরা এক রকম আছি, ব্যবসায় মন্দা চলিতেছে৷ কিছুই করিয়া উঠিতে পারিতেছি না, সালকিয়ার দোকান তুলিয়া দিয়া আমি অন্য কিছু করিব ভাবিতেছি, কী করা যায় বুঝিয়া উঠিতে পারিতেছি না, ফুলবনি কেমন জায়গা?

ফুলবনি থেকে চিঠির উত্তর এসেছিল মাসখানেক বাদে৷ তখন ১৩৪৭-এর চৈত্র৷ রমলা বিবরণ দিয়েছিল ফুলবনির৷ জঙ্গলের দেশ৷ বিকেলে পশ্চিম দিকে পাহাড় দেখা যায়৷ চৈত্র থেকে গরম বাতাস বয়৷ যেমন গরম চৈত্র বৈশাখে, তেমন শীত কার্তিক অঘ্রানে৷ এখানকার জমি মাটির রঙ লাল৷ সাঁওতাল, মুণ্ডা, আদিবাসীদের বাস এখানে৷ তুমি এসে ঘুরে যাও কদিন৷

গুরুদাস আবার পত্র দিয়েছিলেন৷ জবাব এসেছিল৷ জমি খুব সস্তা৷ তুমি এসে দেখে যাও দাদা৷ তিনি একা দেখবেন কেন? সালকিয়া বাজারের দোকান বসে গিয়েছিল৷ দুর্ভিক্ষের পায়ের শব্দ শোনা যাচ্ছিল ধীরে ধীরে৷ ব্রিটিশ সরকার চাল সংগ্রহ করতে আরম্ভ করেছিল৷ ধীরে ধীরে সব জিনিসের দাম বাড়ছিল৷ একে বলে মন্দা৷ তখন যুদ্ধের বাজারের মন্দা শুরু হয়ে গেছে৷ কেউ কেউ লাখপতি হচ্ছে, কেউ নিঃস্ব৷ গুরুদাস চন্দ্র যুদ্ধের বাজারে সুবিধা করে উঠতে পারছিলেন না৷ শরিকি সমস্যাও ছিল৷

কিন্তু দেখা নয়, তিনি সপরিবারে ছয় ছেলে মেয়েকে নিয়ে গঙ্গার পশ্চিমকূল থেকে আরও পশ্চিমে ফুলবনির উদ্দেশে রওনা হয়ে গেলেন৷ বুঝেছিলেন নতুন কোথাও না গেলে, জীবনে ঝুঁকি না নিলে না খেয়ে থাকতে হবে৷ সস্তার জমি আর বন-পাহাড় তাঁকে টেনেছিল৷ ঘিঞ্জি শহর থেকে বের হতে চাইছিলেন৷ শহর ক্রমশ ফিরিঙ্গি সৈন্যের বুটের শব্দে ভয়ের হয়ে যাচ্ছে৷ গুরুদাস যখন স্ত্রী লক্ষ্মীরানিকে বললেন, ফুলবনি যাবেন জায়গা কেমন তা দেখে নিতে৷ তখন লক্ষ্মীরানির কোলে তখন ছমাসের ছেলে৷ অবিন, অবিনাশ৷ লক্ষ্মীরানি জিজ্ঞেস করেছিলেন সব৷ তারপর বলেছিলেন, চলো একেবারে সবাই যাই, দেখতে যাবে, আবার ফিরবে, তার চেয়ে যাই সকলে মিলে, এখেনে থাকার চেয়ে সেখেনে থাকা ভালো হবে মনে হয়৷

সূর্য বলল, দাদু তুমি পথের পাঁচালী পড়েছ, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের?

মনীশ জিজ্ঞেস করল, কেন?

সূর্য বলল, ১৯২৯-এ পথের পাঁচালি প্রকাশিত হয়ে গেছে৷ দুর্গার মৃত্যুর পর বিপর্যস্ত হরিহর বন্দ্যোপাধ্যায় স্ত্রী পুত্র নিয়ে কাশী চলে গিয়েছিলেন ভাগ্য অন্বেষণে৷

অবিনাশ বললেন, তখন এমনি হতো, সে আমলে মানুষের সাহস ছিল, গুরুদাস চন্দ্র, আমার বাবা চাষ জানতেন না৷ শালকের মানুষ, কৃষি জানেন না৷ ব্যবসাপাতি করে বাঁচবেন সেই উদ্দেশে গঙ্গায় ভাসলেন৷ ফুলবনির ভগ্ণিপতি চিঠি লিখে বলেছিল, ঘাটাল পৌঁছতে৷ ঘাটাল থেকে স্থলপথে ফুলবনি৷

আকাশে যুদ্ধ বিমান৷ শহরে সেনাবাহিনীর বুটের শব্দ৷ তিনি নদী পথে গঙ্গা ধরে দক্ষিণ পশ্চিমে এগিয়ে রূপনারায়ণ নদে পড়ে একটি খাল ধরে শিলাবতী নদীতে ঢুকেছিলেন৷ মাঝি পথ চিনত৷ শিলাবতী বেয়ে ঘাটাল শহর৷ ঘাটাল থেকে ফুলবনি অনেক দূর৷ কিন্তু স্থলপথে যাওয়া যায়৷ গোরুর গাড়িতে করে স্ত্রী-পুত্র-কন্যা নিয়ে প্রায় নিরুদ্দেশ যাত্রা করলেন৷ গোরুর গাড়িতে চেপে দিন তিনেক লেগেছিল শালবনি পৌঁছতে৷

সূর্য বলল, দাদু বিভূতিভূষণের একটি গল্প এমন আছে, গুরুদাস চন্দ্র বই পড়তেন?

জানিনা, বাবার মুখে তো আমি শুনিনি কোনোদিন তাঁর নাম, আমি কলেজে ঢুকে পড়েছি পথের পাঁচালী, আর সিনেমাও দেখেছি সেই সময় বোধহয়৷

সূর্য বলল, দাদু আমার মনে পড়ে যাচ্ছে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘নদীর ধারে বাড়ি’ গল্পের কথা৷ সেখানেও যুদ্ধের সময় সওদাগরি অফিসের কেরানিবাবু কলকাতার বসতি তুলে, চাকরি ছেড়ে চলে গিয়েছিল বনগাঁ-রানাঘাট লাইনে গাংনাপুর স্টেশনে নেমে দশমাইল দূরের এক নদীর ধারের গ্রামে৷

বিমর্ষ অবিনাশ বললেন, গল্পে যা হয়, জীবনে কি তা হয়?

সূর্য বলল, বিভূতিভূষণ সেই গল্পে বলছেন, বিলেত থেকে লোক গিয়ে আমেরিকায় বাস করে আমেরিকা যুক্তরাজ্য স্থাপন করেছিল৷ অজানায় পাড়ি না দিলে মানুস, মানুষ হয়ে ওঠে না৷ জীবনে ঝুঁকি নিয়েই মানুষ বড় কিছু করতে পারে৷ বাঁচতে পারে ভালোভাবে৷

কবিতা লেখার জন্য ইঞ্জিনিয়ারিং না পড়ে, ফিজিক্স অনার্স ছেড়ে তুই বাংলা অনার্স নিলি, তোকে নিয়ে তোর বাবার খুব আশা ছিল সূর্য, আশাভঙ্গের দুঃখ ছিল৷ অবিনাশ বললেন৷ আমি যা করেছি মন চেয়েছে বলেই করেছি৷ বলল সূর্য৷ দপ করে জ্বলে উঠল যেন তার চোখ৷

অবিনাশ আর সূর্যর কথা শুনছিল মৃণাল ও মনীশ৷ তাদের পিছনে অভিষেক৷ অভিষেকের বছর তিরিশ বয়স৷ সে বিডিও অফিসে চাকরি করে৷ চুপচাপ থাকে৷ অবাক হয়ে শুনছিল সব৷ কিছুই জানে না৷ মা তো বলেনি৷ বলেনি কারণ সে শুনতে চায়নি৷ মা তো বলেছে অনেকবার যে মায়েদের আদি বাড়ি ছিল হাওড়া জেলার সালকিয়াতে৷ সে তো কোনোদিন শুনতে চায়নি মায়ের ঠাকুরদা ফুলবনি এসে পৌঁছলেন কী করে? তিনদিন লেগেছিল ফুলবনি আসতে৷ সন্ধে হলে কোনো গ্রামে আশ্রয়৷ খোলা মাঠে রান্না করে খাওয়া৷ সকালে আবার যাত্রাশুরু৷ ক্রমশ বদল হয়ে যেতে লাগল মাটি৷ লালচে রঙ৷ পাথরের চাঙড় হেথা হোথা৷ পথে চড়াই উতরাই কম নয়৷ কখনো ধু ধু প্রান্তর৷ মাঠের শেষই হয় না৷ মাঝে মধ্যে বড় বট অশ্বত্থ৷ তার ছায়ায় নেমে ফলার করা৷ বড়, মেজ, সেজ আর দুই মেয়ের ছুটোছুটি৷ আবার চলাশুরু৷ বাতাসে আগুনে ভাব যায়নি তখনো৷ মাসটা জৈষ্ঠ্যের শেষ৷ একবার পথ ভুল করেছিল গাড়োয়ান৷ বাঁকুড়ার দিকে চলে গিয়েছিল গাড়ি৷ পথে জিজ্ঞেস করে আবার ফিরেছিল ঠিক রাস্তায়৷ সমস্ত পথ দুই মেয়ে চার ছেলে কলকল করতে করতে থেমে গিয়েছিল৷ আর কতদূর সেই ফুলের বন ফুলবনি? পিসির বাড়ি? চাষের জমি কেমন সিঁড়ির মতো উঠে গেছে৷ তারা কেউ এমনি দেখেনি৷ যেতে যেতে গাড়োয়ান বলল, সেদিকে একটা ডাঙা আছে, যেখেনে বক রাক্ষসের হাড় দেখা যায়৷ সেখেনে গনগন করে আগুন৷ হুঁ, গনগনির ডাঙা৷ সেই ডাঙাকে ডান দিকে রেখে গোরুর গাড়ি দুটি ফুলবনির পথ ধরল৷ এবার জঙ্গল দেখা গেল৷ সবুজ পাতায় ভরা গাছ৷ জঙ্গলের পাশ দিয়ে গাড়িদুটি চলল৷ অমন বন কোনোকালে দেখেনি গুরুদাসও৷ মুগ্দ হয়ে ছেলেমেয়েদের বলল, দেখ, দেখেনে জঙ্গল কাকে বলে৷ কত বড় বড় শালবন৷ এরে বলে শালগাছ৷ শালকেতে থাকলে দেখতে পেতিস? হাঁ ভাই কী কী গাছ আছে এই বনে?

গাড়োয়ান বলেছিল, ঐটে মহুল গাছ, হরিতকী আছে, পিয়াল, অজ্জুন, চাকুন্দা গাছ, কতরকম যে গাছ আছে তার শেষ নেই, পাখির ডাক শুনছেন বাবু?

কী পাখি?

বনের পাখি, একটা ডাকে অন্যটা সাড়া দেয়৷

তারা শুনতে পাচ্ছিল৷ বন পেরিয়ে আবার লাল মোরামের রাস্তা৷ বেলা পড়ে আসছে৷ গাড়োয়ান বলল, বাবু ঐ দেখেন পাহাড়৷ পাহাড়! পাহাড় দেখা যাচ্ছে দূর পশ্চিমে৷ নীল৷ মেঘের মতো ঢেউ তাতে৷

লক্ষ্মীরানি মাথার কাপড় যে পড়ে গেছে সে খেয়াল নেই৷ অবাক হয়ে পাহাড় দেখতে লাগল৷ পাহাড় কোনোদিন দেখেনি সে৷ শালকেতে থাকলে দেখতে পেত এমন বন এমন পাহাড়? গাড়োয়ান বলল, ওই দিকে পাহাড় যে আরম্ভ হলো আর শেষ নাই৷

কতদূর হবে? জিজ্ঞেস করেছিল লক্ষ্মীরানি৷

গাড়োয়ান বলেছিল, পাহাড় না মা হাঁটে, ছল করে মানষির সঙ্গে, যত যাবে, ততো পিছবে, ভুলোর মতো ছুটায়ে নিয়ে যাবে৷

পাহাড়ে কি পৌছনো যায় না?

যায় মা, কিন্তু অনেক ঘুরের পর, এই দেখছ কাছে, কিন্তু পথ আর ফুরায়নি৷

পেছনের গাড়ি থেকে গুরুদাস ডেকেছিল, পাহাড় দেখলে, শালকের চেয়ে ভালো হলো কি না বলো৷

হ্যাঁ৷ মাথায় কাপড় তুলতে তুলতে অস্পষ্ট জবাব দিয়েছিল লক্ষীরানি৷

শালকে তুমি গেছ দাদু? সূর্য জিজ্ঞেস করে৷

গিয়েছিলাম, এক রাত্তির থেকে চলে এসেছিলাম৷

কেন, চলে এলে কেন, ওপারেই তো কলকাতা৷

অবিনাশ বললেন, ইটচাপা ঘাসের মতো লেগেছিল শালকে, শুধু দালান-কোঠা, ভেঙে ভেঙে পড়ছে, আমাদের শরিক জেঠা-কাকাদের অংশ মেরামত করার ক্ষমতা তাঁদের নাই৷ সূর্য বলল, সেই পাহাড় যা দেখেছিল তোমার ঠাকুরদা ঠাকুমা, সব আছে এখনো৷

আছে, পৃথিবীতে সব থেকে যায়, মানুষের সামান্য আয়ু৷

গোরাবাড়ির জঙ্গল দেখেছিল মনে হয়? সূর্য বলল৷

হ্যাঁ, তাইই হবে৷

সেই গনগনির ডাঙাও আছে দাদু৷ সূর্য বলল৷

সবই আছে, চন্দ্র সূর্য গ্রহ তারা...সব, শুধু যে যায়, চলেই যায়৷ বৃদ্ধের গলা কেঁপে যায়৷

তোমরা চলে এসে ভালো করেছিলে৷ সূর্য বলল, এর পরের বছর তো দুর্ভিক্ষ এসে গেল৷

তুই জানিস? অবিনাশ জিজ্ঞেস করলেন৷

বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটা উপন্যাস আছে অশনি সঙ্কেত৷ বলে মাথা নামায় সূর্য৷ চুপ করে গেল৷ বাবার কাজ করল আজ৷ নিরাকার দেহে অন্ন আর জল নিতে এসেছিলেন তিনি৷ ১৩৫০-র মন্বন্তরে কত মানুষের অন্ন আর জল ছিল না৷ বেঁচেও না, মরেও না৷ শুনেছে সে মায়ের কাছে৷ মা শুনেছিল নিজের ঠাকুমার কাছে৷ কলকাতার রাস্তায় পড়ে থাকত অন্নহীন মৃতদেহ৷ শালকে কি আলাদা ছিল কিছু? শালকের রাস্তাতেও নিশ্চয় ফ্যান দাও মা করতে করতে মরে পড়েছিল অনেক অন্নহীন৷

অবিনাশ জিজ্ঞেস করলেন, কবে পড়লি তুই, তোর বাবা তো পড়েনি এসব?

কবে পড়েছি মনে নেই দাদু৷ সূর্য বলল পুব আকাশে তাকিয়ে৷ বেলা শেষ হয়ে গেল৷

তিন


পাহাড় আর অরণ্য দেখতে দেখতে পৌছন গেল এই ফুলবনি৷ রমলার শ্বশুর বাড়ি৷ তারা সাহায্য করেছিল খুব৷ জমি সস্তা৷ বিঘে দুই কিনে মাটির বাড়ি খড়ের চাল দিয়ে বসতবাটি নির্মাণ করে গুরুদাস বাস করতে আরম্ভ করেন সেই অচেনা গঞ্জে৷ আর কিনেছিলেন বিঘে পঁচিশ জংলা জমি, পাথুরে৷ চাষবাস করবেন৷ সব বুঝিয়ে দিয়েছিল রমলার শ্বশুর৷ মানুষটির অন্তর ছিল শুদ্ধ৷ তিনি চেনা আদিবাসী চাষিদের ডেকে ভাগে চাষ করে দিতে বললেন৷ যে বছর বৃষ্টি হতো ভালো, ধান পেতেন, না হলে জমির ধান পাকার আগেই জমিতে মরত৷ ফুলবনিতে জলের খুব অভাব৷ গ্রীষ্ম ভয়ানক৷ শীত খুব তীব্র৷ বর্ষা খুব বেশি হয় না৷ মাটিতে জল পড়লেই শুষে নেয়৷ পুঁজি ফুরিয়ে যাচ্ছিল তাড়াতাড়ি৷

তখন কী করবেন?ব্যবসাপাতি৷ ছোটখাটো ব্যবসা৷ কোনোটায় লাভ করেছেন, কোনোটায় পুরো লোকসান৷ ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া শেখাবেন, কী করে তা হবে?চার পুত্রের কনিষ্ঠ এই অবিনাশ ব্যতীত কেউ গ্র্যাজুয়েট হয়নি৷ তবে সে আমলে কজনই বা গ্র্যাজুয়েট ছিল? ছেলেরা বড় হতে নেমে পড়েছিল ব্যবসায়৷ তারাও যে সফল হয়েছিল তা নয়৷ তিনি কী না করেছেন, দোকানে কাজ করেছেন, মিলিটারি ক্যাম্পে ভাত সাপ্লাই করিয়েছেন বড় ছেলেকে দিয়ে৷ ফুলবনিতে একটা ক্যাম্প ছিল৷ সেই ক্যাম্পে গিয়ে ফাই-ফরমাসও খেটেছে মেজজন৷ অবিনাশ যখন কলেজে গেছেন, সব সামলে নিয়েছেন গুরুদাস৷ তিনি ভাগ্য বদলাতে এসেছিলেন, বদলে নিয়েছিলেন তো সত্য৷

সূর্য বলল, দাদু সন্ধে হলো প্রায়৷

অবিনাশ আচ্ছন্নের দৃষ্টিতে তাকালেন সকলের দিকে৷ অনেকজন হয়ে গেছে৷ সদ্য বিধবা পুত্রবধূও এসে দাঁড়িয়েছে৷ তিনি বললেন, আজ বুদ্ধ পূর্ণিমা৷

হ্যাঁ বাবা, আপনি ভিতরে গিয়ে বিশ্রাম নিন৷ অনুনয় করল সূর্যর মা চন্দনা৷

যখন সন্ধে হতো, সেই শুক্রবারের কথা কেউ জানো?

কী কথা? সূর্য জিজ্ঞেস করল৷

অবিনাশ বললেন, নদীর নামটি অঞ্জনা, তাহার নামটি রঞ্জনা, বাবা একদিন বসিয়ে দিলেন রেডিয়োর সামনে, রাত আটটার আগে কাজ শেষ করে নাও সবাই, ছেলের বউরা, দুই মেয়ে, ছেলেরা সব রেডিয়োর সামনে এসে বসল, সব শুক্রবারেই রেডিয়ো নাটক, মনে আছে তোর মনীশ?

মনীশ বলল, মনে আছে, আমিও শুনেছি৷

আর কী মনে আছে?

মনীশ চুপ করে আছে৷

তোমরা জানো বউমা?

কেউ কোনো কথা বলল না৷ তখন অবিনাশ বললেন, চাঁদ উঠেছে তো?

হ্যাঁ, জ্যোৎস্না এসে পড়েছিল সকলের অলক্ষ্যে৷ মৃণাল ভাবছিল ভিতরে গিয়ে টেলিভিশনে আই.পি.এল. দেখবে৷ সে পায়চারি করছিল৷ পিতামহের এই কাহিনি সে শুনেছে অনেক৷ এখন আর নতুন কিছু মনে হয় না৷ নীলুর মৃত্যু একেবারে দুমড়ে দিয়েছে কাকাকে৷ নীলু যখন উগ্রপন্থীদের নামে হুমকি পাচ্ছিল, তাকে ফোন করেছিল৷ তার শ্বশুর মশায় ঝাড়গ্রামের প্রভাবশালী মানুষ৷ এসপি, ডিএম--- সব মহলে ভালো যোগাযোগ৷ মৃণাল বলেছিল ব্যবস্থা করবে পুলিশি সাহায্য দিয়ে৷ যারা হুমকি দিচ্ছিল তারা সুযোগ সন্ধানী৷ মাওবাদি কি না সন্দেহ৷ মৃণাল ভুলে গিয়েছিল বলতে৷ অবিনাশ বললেন, মৃণাল যেও না, আবার কবে আসবে জানি না, আমিই বা কতদিন থাকব৷

থাক ওসব৷ মৃণাল বলল৷

আমরা মনে করি যা, সব তো ঠিক মনে করি না, তুমি পারনি, পারনি আমি জানি, খেদ নেই তাতে৷

মৃণাল মাথা নামিয়ে দাঁড়িয়ে থাকল৷ অবিনাশ বললেন, আলো নিভিয়ে দাও বাইরের৷

কেন? জিজ্ঞেস করল মনীশ৷

অবিনাশ বললেন, জ্যোৎস্না হয়েছে, সামনে দেখ কত বড় চাঁদ!

সূর্য বলল, দাদু তুমি কি? কথা অসমাপ্ত রয়ে গেল৷

হ্যাঁ, আমি তাই চাই৷ অবিনাশের গলা ধরে গেল৷

দাদু কথাটা কি সত্যি?

হ্যাঁরে সত্যি, দুঃখ বয়ে বেড়ালে তোর কবিতাও হবে না, তোর ফুলবনি যাত্রা থেমে যাবে৷

মুণ্ডিত মস্তক গৌরবরণ যুবক বলল, মা জ্যোৎস্না রাতে লুকোচুরির কথা বলেছিলে না তুমি?

তোর বাবা বলেছিল আমাকে৷ মুখে আঁচল চাপা দিল চন্দনা, তাঁর ঠাকুরদা সকলকে নিয়ে পূর্ণিমা রাতে খেলতেন লুকোচুরি৷

স্বর্গীয় গুরুদাস চন্দ্র৷

সামনে খোলা উঠন৷ প্রাচীন এক শিউলি গাছ৷ দুটি আম গাছ, একটি নিম৷ জ্যোৎস্না ছড়িয়ে পড়ছে সমস্ত খোলা জায়গায়৷ গাছের ছায়া পড়েছে তার ভিতর৷

সন ১৩৬০ বঙ্গাব্দ, বৈশাখী পূর্ণিমার রাতে গুরুদাস বললেন, এস, আমরা সকলে জোছনায় লুকোচুরি খেলি৷

আমরা সবাই মিলে?

হ্যাঁ মা, তার ভিতরে নীলুও এসে যাবে৷

কে নীলু? লক্ষ্মীরানি জিজ্ঞেস করেছেন, নীলু বলে তো কেউ নেই৷

কেন অবিনের ছেলে৷

অবিন, তার তো বারো বছর সবে৷ লক্ষ্মীরানি বললেন৷

গুরুদাস বললেন, জোছনায় নেমে পড়, শালকেতে এমন চাঁদের আলো ছিল না৷

সেই রাত্রি ফিরে এসেছে আবার৷ সকলে যেন ঘুম ভেঙে উঠে চন্দ্রালোকিত প্রাঙ্গনের দিকে তাকায়৷ আম, শিউলি আর নিমের ছায়াটুকুতে অন্ধকার৷ তা বাদে আলোয় সব ঝিলমিল করছে৷ সূর্য বলল, মা এস, এমন জোছনা শালকেতে ছিল না৷

চন্দনা ডাকল বিলুর বউকে৷ সে ডাকল মনীশের বউ সুমনাকে৷ মনীশের বউ সুমনা ডাকল মল্লিকাকে৷ মল্লিকা ডাকল মৃণালের বউ চম্পাকে৷ সূর্য ডাকল অভিষেককে৷ আর অবিনাশ ডাকলেন নীলুকে৷ আয়, এমন চাঁদের আলো বৃথা কেন নষ্ট হবে৷

গুরুদাস বললেন, আমি বুড়ি হই, আমাকে ছুঁতে হবে৷

নীলু৷ নীলুর মুখ দেখা গেল যেন৷ সূর্য জোছনার ভিতরে হেঁটে যেতে যেতে বলল, আমি ফুলবনি যাত্রা করেছি বাবা, দেখো পারব ঠিক, ঠিক পৌঁছে যাব, ভেবো না, পাহাড় অরণ্য, গনগনির ডাঙা চিনে চিনে...৷

Copyright © 2022 Rupkatha Live. All Rights Reserved. Powered by : Technotrick Systems.