গল্প

গল্প দাম্পত্যে অম্লমধুর

দাম্পত্যে অম্লমধুর

লেখক : অলোক কুমার দত্ত

পর্ব-১


‘গামছারও শখ জাগে ধোপাবাড়ি যাওয়ার’---এই বাক্যের অবতারণা কারণ এক দম্পতির একমাত্র পুত্র সন্তান ছিল; কিন্তু জন্মগত তাঁর পিঠে এক কুঁজ৷ সেই সন্তানের শখ জাগল বিয়ে করার৷ অগত্যা সেই দম্পতি পুত্রের বিয়ে দিয়ে সংসার যাপনে ব্রতী হল এবং বিয়ের সময় লুকিয়ে চেপে গিয়ে ছেলের বিয়ে দিল এবং বেয়াই বাড়ির উদ্দেশ্যে মন্তব্য করল---‘সুখ করলো মোর কুজা পুতে’৷ এই শুনে বেয়াই মশাই মন্তব্য করলেন---‘ট্যাড্ডি পারা ধেইল্যা নিতে৷’ অর্থাৎ তাঁদের মেয়েও খোঁড়া৷ সুতরাং কাঠে কাঠ৷ অর্থাৎ কুঁজো বরের খোড়া বউ৷

পর্ব-২


একদিন এক ডাইনিং টেবিলে শ্বশুর-শাশুড়ি ও ননদকে খাবার পরিবেশন করছিল নববধূ৷ এমন সময় সেই বৌদির একটি বাত্‌কায় বেড়িয়ে যায় প্রকৃতির ডাকে৷ ননদ সব বুঝতে পেরে নানারকম আওয়াজ করতে থাকে যাতে বৌদির ওই পিছনের আওয়াজ নিউট্রালাইজ হয় ও অন্যরা বুঝতে না পারে চট করে৷ শ্বশুরমশাই ননদের এই বুদ্ধিমত্তার পরিচয় পেয়ে নিজের মেয়েকেই পুরসৃকত করেন ও প্রশংসা করেন৷ সেই শুনে ক্ষুব্ধ বৌদি বলে ওঠেন---‘কে বা বাজায় বাঁশি কে বা পায় থাল কাশি৷’ অর্থাৎ মূল চক্রী কে আর পুরসৃকত হচ্ছে কে!

পর্ব-৩


পাড়াগাঁয়ের এক সদ্য বিবাহিত দম্পতি খেয়ে দেয়ে শুয়ে শুয়ে তারা খুনশুটি করছিল রোজকার মতন৷ হঠৎ মাঝরাতে তাঁরা চিৎকার শুনতে পায় ‘চোর’ ‘চোর’ ‘চোর’! সবাই বাইরে একে একে জড় হচ্ছে৷ পাড়াময় চিৎকার চেঁচামেচি এমতাবস্থায় স্ত্রী স্বামীর উদ্দেশ্যে বলে উঠল---‘তুমি তো পুরুষ মানুষ, যাও না চোর ধরতে, সবাই বাইরে বেরোচ্ছে, তুমিও বেরোও৷’ শুনে ভীতু স্বামী বলে উঠল---‘আমি তো পুরুষ তোমার কাছে৷’

পর্ব-৪


পাড়াগাঁয়ের এক সদ্য বিবাহিত সরল সাদা দম্পতি৷ নতুন বিবাহিত জীবন অতিবাহিত হচ্ছে মহা আনন্দে৷ এমন সময় এক দূর সম্পর্কীয় আত্মীয় তাদের বোঝায়---আমি তোমাদের জন্য পুকুরপাড়ে নারকেল গাছের গোড়ায় বিশাল গর্ত করে প্রচুর চাল সংগ্রহ করে রেখেছি৷ তোমরা আলাদা হয়ে সংসার পাতলে তোমাদের কোনও অসুবিধা হবে না৷ তাই দিবারাত্র কানের পোকা খেয়ে ফেলতো---ওরে ব্যাডা ভেন্ন হ৷ ওরে ব্যাডা ভেন্ন হ৷ একদিন সত্যি সত্যি ওই কথার বশবর্তী হয়ে তারা একান্নবর্তী পরিবার থেকে বেরিয়ে ভিন্ন সংসার পাতল৷ তাঁর কথামতন পুকুরপাড়ে নারকেল গাছের গোড়ায় সেই চাল সংগ্রহ করতে গেলে আবিষৃকত হল---সব চাল উইপোকা খেয়ে নিয়েছে৷ পরের কথায় নাচলে কি হয় তারা তা হাতে নাতে টের পেল৷ এ কুলও গেল ও কুলও গেল৷

পর্ব-৫


ঝগড়ার সময় স্ত্রী-এর বচন :

ডাক্তারের স্ত্রী---অ্যান্টিবায়োটিক ডোস দিয়ে দেবো৷
শিক্ষকের স্ত্রী---আমাকে বেশি শেখাতে এসো না৷
অটোওয়ালার স্ত্রী---একটু চেপে যাও, আরও চাপো!
অভিনেতার স্ত্রী---আমার সাথে নাটক করতে এসো না৷
পকেটমারের স্ত্রী---পকেট কাটলেও বুঝতে পারবে না৷
পাইলটের স্ত্রী---বেশি উড়ো না বুঝলে!
ধোপার স্ত্রী---একদম ধুয়ে দেবো৷
পুলিশের স্ত্রী---ঘুষ খাও তো, ঘুষি খেয়ো না৷
ডেন্টিস্টের স্ত্রী---এক চড়ে সব দাঁত ফেলে দেবো৷
দোকানদারের স্ত্রী---আমাকে সস্তার মাল পেয়েছো?
উকিলের স্ত্রী---আমাকে আইন শেখানে এসো না৷
কষাইয়ের স্ত্রী---কেটে টুকরো টুকরো করে ফেলবো৷
বেকারের স্ত্রী---তোমার কিছু করার মুরোদ নেই৷
কৃষকের স্ত্রী---এবার বোঝো কত ধানে কত চাল৷
ইঞ্জিনিয়ারের স্ত্রী---মেরে বালি চাপা দিয়ে দেবো৷
সাংবাদিকের স্ত্রী---বাড়ি এসো, আজ তোমার খবর আছে৷
জেলের স্ত্রী---মেরে শুটকি মাছ বানিয়ে দেবো৷
মন্ত্রীর স্ত্রী---লাল বাতি জ্বালিয়ে দেবো৷
বিচারকের স্ত্রী---দু ভাই (ইডি-সি বি আই)কে ডেকে দেবো৷
সঞ্চালকের স্ত্রী---ঘন্টাখানেক সংগে সুমন---আমার সাথে নয়৷

পর্ব-৬


দুই বাংলার দম্পতির কথোপকথন :

ওপার বাংলার দম্পতি---আপনাগো ইন্ডিয়া-তে পাড়ি দিসিলাম৷ গিয়া ট্রানজিস্টারে মোহরদির গান শুইন্যা পড়ানডা জুড়ায়ে গেসিলো৷ হেইয়্যা আপনাগো ভাষা দিয়া বুঝাইতে পারুম না৷

এপার বাংলার দম্পতি---আমরা এপার বাংলার বাঙালিরা ভীষণ আড্ডাবাজ, ভোজনরসিক, ভ্রমণপিপাসু৷

ওপার বাংলার দম্পতি---আমাগো দ্যাশে, আমার বাসায় একবার আসেন, নিমন্ত্রণ রইল, নাস্তা-পানি খাইবেন, দুপুরে পদ্মার ইলিশ ভাপা ও সর্ষে ইলিশ, সংগে আমাগো উপহার---গাইসাল মার্কেটের দামদানি শাড়ি৷

এপার বাংলার দম্পতি---আপনাদের বাংলাদেশের রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী রেজওয়ানা বণ্যা চৌধুরীর গান আমাদের খুবই আকৃষ্ট করে৷ তার সাথে মিতা হক্‌ ও অদিতি মহসীনের রবীন্দ্রসংগীত৷

ওপার বাংলার দম্পতি---আপনারা কাইলেন যে, আপনারা আড্ডাবাজ কিন্তু তিনজন বাঙালি এক হইলেই একটা ক্লাব বা একটা দল বানাইয়া ফ্যালেন৷ আপনারা ভোজনরসিক ঠিকই কিন্তু কাঁটা চামচ দিয়া খাওয়া শুরু কইর‌্যা শ্যাস্‌পর্যন্ত কব্জি ডুবাইয়া খাওয়া শেষ করেন৷ হেইয়্যা আপনাগো বৈশিষ্ট্য৷ ভ্রমণে বাইরাইয়া আপনারা ভাতঘুমের চেষ্টা করেন৷ আর পি. এন. পি. সি. করতে আপনারা সিদ্ধহস্ত৷

এপার বাংলার দম্পতি---আপনাদের ভাষা দিবস ছাড়া আর কীই বা আছে! আমাদের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, অমর্ত্য সেন, বিনায়ক অভিজিৎ ব্যানার্জী, সৌরভ গাঙ্গুলী, প্রণব মুখার্জী আরও প্রমুখ আছে৷ যা বলে শেষ করা যাবে না!

Copyright © 2022 Rupkatha Live. All Rights Reserved. Powered by : Technotrick Systems.