প্রবন্ধ

প্রবন্ধ মঙ্গলের মাঙ্গল্য

মঙ্গলের মাঙ্গল্য

লেখক : তুষার রায়


পর্ব ৪

চন্দ্রবানের যুগান্তকারী সাফল্যের পর চাঁদের বা অন্য গ্রহের মাটিতে ‘চরে বেড়ানো’র “রোভার” কি জিনিস তা বুঝতে সাধারণ মানুষেরও এখন অসুবিধা হচ্ছে না। তাই রোভার কি তা নিয়ে বেশি কিছু লেখার প্রয়োজন নেই।শুধু এটুকু বললেই চলে যে এটি একটি স্বয়ং চালিত ছোট মোটর গাড়ি বা হেলিকপ্টার(Ingenuity)।
জানুয়ারি ২০২৩ এর অবস্থান এই যে পৃথিবীর মোট দুটি দেশের তিনটি ‘রোভার’ মঙ্গলের ‘মাটি’তে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এরা হল: ‘নাসা’র “কিওরিওসিটি” আর “পারসিভিয়ারেন্স” আর চীন দেশের “ঝুরঙ্গ”। যদিও ঝুরঙ্গ এক বছরেরও উপর( ২০২২ এর মে মাসের ২০ তারিখ থেকে) হাইবারনেশন বা দীর্ঘ-নিদ্রায় রয়েছে।
মঙ্গলে যান এবং ‘রোভার’ পাঠানোর ইতিহাসও সময়ের হিসাবে কম দীর্ঘ নয়।‘নাসা’র সবচেয়ে ছোট কিন্তু অত্যন্ত সাফল্য জনক মঙ্গল যান,”সোজর্নার”(Sojourner) ১৯৯৭ সালে মঙ্গল পৌঁছে ছিল; তারপর গেল “স্পিরিট”।সন ২০০৪ থেকে ৬ বছর দারুণ কাজ করল ‘স্পিরিট’;এরপরে গেল “অপরচুনিটি”,চল্লিশ কোটি আমেরিকান ডলার খরচের এই প্রকল্প অসাধারণ সাফল্যে কাজ করল ২০০৪ থকে ২০১৮ পর্যন্ত।আজ পর্যন্ত পাঠানো মঙ্গল যানের মধ্যে সবচেয়ে সফল আর কার্যকারী ছিল এই রোভারটি।পনেরো বছর যাবত মঙ্গলের ৪৫.১৬ কিলোমিটার স্থান ‘ঘুরে-বেড়িয়ে’ অসংখ্য তথ্যে সমৃদ্ধ করেছে ‘নাসা’কে। শেষ পর্যন্ত ২০১৫ তে নাসা অপরচুনিটিকে মৃত ঘোষণা করল। তারপর গেল “কিওরিওসিটি” ২০১২ সালে আর মাত্র দু’বছর আগে (২০২১) মঙ্গলে পৌঁছল আর এক অসাধারণ মঙ্গল যান: “পারসিভিয়ারেন্স”।কিওরিওসিটি এবং পারসিভিয়ারেন্স এখনও অসাধারণ কাজ করে চলেছে।এতসব কাজ কেন হচ্ছে? অবশ্যই জলজ্যান্ত মানুষ পাঠাবার আগে গ্রহটির সম্বন্ধে ভালভাবে জ্ঞান আহরণ।
দেখাই যাচ্ছে কলোনি’ স্থাপনের প্রতিযোগিতায় মঙ্গলের ‘পথে’ ‘পথে’ ট্রাফিক-জ্যাম বা ‘যান-জট’ বেশ জমে উঠেছে।
‘মঙ্গলে বেড়াতে যাচ্ছি’-কথাটা আজ বোধ হয় দিবা-স্বপ্ন অথবা ‘আঁতেল-জোক’ বলে মনে করার দিন শেষ হয়েছে। শীঘ্রই এটি সম্ভব হতে চলেছে।এর জন্য প্রয়োজন? শারীরিক শক্তি,অল্প কিছুদিন ট্রেনিং আর কিছু পূঁজি (মাত্র ৫ লক্ষ আমেরিকান ডলার)।হাসবেন না-ইতিমধ্যেই বুকিং শুরু হয়ে গেছে,মানে, অনেকেই নাম তালিকাভুক্ত করে নিয়েছে। নাসা(NASA)এই কারণে তাদের ওয়েব সাইটের ঠিকানাও দিয়েছে। পৃথিবীর সেরা ধনী এলন মাস্ক(Elon Musk ),বর্তমানে ‘টুইটার’ বা “X“ আর ‘স্পেস এক্স(Space-X )’ নামের একটি বেসরকারি মহাকাশ সংস্থার মালিক।ওদেরই তৈরি চরম শক্তিশালী ফ্যালকন-৯ রকেট সুদূর মহাকাশ যাত্রার খুব উপযোগী এবং কম খরচের বলে প্রমাণিত হয়েছে। আবার, আরও সম্প্রতি স্পেস এক্স, ফ্যালকন-৯ আর “ড্রাগন” ক্যাপস্যুলের পরিবর্তে “স্টার-শিপ” নামক রকেট-ক্যাপস্যুল ব্যাবহার করতে আরম্ভ করেছে।এতে রকেটটি ধ্বংস হয় না- কাজ শেষে প্যারাসুটের সাহায্যে নিরাপদে পৃথিবীতে নেমে আসে হাওয়াই জাহাজের মত এবং আবার ব্যাবহারের যোগ্য থাকে। এতে করে খরচ এক শতাংশ কমে যায়। প্রায় সাড়ে তিন বছর আগে ৩০শে মে,২০২০ তে স্পেস-এক্স এই উপায়ে একদল মহাকাশচারীকে মহাকাশে ভাসমান আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে দু’মাস ‘ভ্রমণ’ করিয়ে দু’মাস।

২-
পরে,২’রা আগস্ট পৃথিবীতে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছেন।এই ঘটনার ভিডিও আমরা টি ভি’ তে দেখেছি। এঁরাই বলছেন এবার যাত্রী নিয়ে মঙ্গল গ্রহে যাতায়াত শুরু করবেন।প্রায় ৮ হাজার বৈজ্ঞানিক,ইঞ্জিনিয়ার ও টেকনিশিয়ান নিয়ে।
এই সংস্থা ইতিমধ্যেই কাজে অনেক এগিয়ে গেছেন।এঁরাই এখন জোর দিয়ে বলছেন যে মঙ্গলে যাওয়া এমনকি সেখানে বসতি স্থাপন করা কয়েক বছরের মধ্যেই সম্ভব হবে।
কিন্তু মনে রাখতে হবে মঙ্গলের উপর গড়ে তাপমাত্রা মাইনাস ৫৮(-৫৮)ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড আর মঙ্গলের উপর আবহাওয়ার বায়ুচাপ আমাদের পৃথিবীর উপর বায়ুচাপের মাত্র ১০০ ভাগের ১ ভাগ।মঙ্গলের আবহাওয়ার ৯৬ ভাগ হল কার্বন-ডাই-অক্সাইড,অক্সিজেন নেই বললেই চলে, মাত্র শতকরা ০.১৩ ভাগ।তাই কোন মানুষ অক্সিজেন মাস্ক ছাড়া এক মুহূর্তও মঙ্গলের উপর বেঁচে থাকতে পারবে না। আর মঙ্গলের উপর খাবার জলও ত নেই,অতএব খাবার জলের ব্যবস্থাও করতে হবে। এইসব ব্যাপার গুলো মাথায় রেখেই মঙ্গল-যাত্রার পরিকল্পনা করতে হবে;সম্ভবত ওরা করছেনও। আর যেহেতু দুই গ্রহের সূর্য প্রদক্ষিণের কক্ষ এক সমতলে নয় আর মঙ্গলের কক্ষপথ পৃথিবীর কক্ষপথের থেকে অনেক বড়,তাই মঙ্গলে যাত্রার জন্য পৃথিবী আর মঙ্গল যথাসম্ভব কাছাকাছি আসতে হবে। মনে রাখতে হবে মঙ্গল গ্রহ কখনও পৃথিবীর থেকে ৫৪৭ লক্ষ কিলোমিটারের (চাঁদের থেকে ১৬৩ লক্ষ কিলোমিটার দূরে) কাছে আসেনা,আর এই কারণে মঙ্গলে পাড়ি দিতে মহাকাশ যানের ১২৮দিন থেকে ৩৩৩ দিন লাগা উচিত।মনে আছে ত আমাদের ‘চন্দ্রবান-৩’ এর চাঁদে পৌছাতে লেগেছিল ৪১ দিন।
(ক্রমশ)

Copyright © 2022 Rupkatha Live. All Rights Reserved. Powered by : Technotrick Systems.