নব্বর্ষ সংখ্যা✍
কোথাও কেউ নেই
লেখক : সুভাশীষ দত্ত
সকাল নʼটা, মফস্বল শহর চাকদহ স্টেশনে জনসমাগম প্রচুর। কত মানুষ কত প্রয়োজনে বাইরে যাচ্ছে, আবার বাড়িতেও ফিরছে। সামনে দাঁড়ানো একজন মধ্যবয়স্ক ব্যক্তি একটি অল্প বয়সী মেয়ের দিকে রিরংসা দৃষ্টি চোখে তাকিয়ে দেখছে। মানুষ শুধু ছুটছে আর ছুটছে, এরইমধ্যে দিগন্ত একা একা বসে আছে প্ল্যাটফর্মের মধ্যে একটা কংক্রিটের বেঞ্চে। প্লাটফর্মে বসে থাকার অভ্যাসটা দিগন্ত যুবক বয়স থেকে শুরু করেছে। যখন সে চাকরি পায়নি তখনও বন্ধু-বান্ধবদের সাথে প্লাটফর্মে বসে বহু সময় কাটিয়েছে। এরপর চাকরি পাওয়ার পরেও প্লাটফর্মে বসার অভ্যাসটা তার বজায় ছিল। আজ অবশ্য দিগন্ত প্লাটফর্মে বসে বসে অপেক্ষা করছে একটা অন্য কারণে, যা তাকে কিছুটা বিব্রতও করছে। করোনা নামক অতিমারির জন্য এই মফস্বল শহরে ভালো মাস্ক আর স্যানিটাইজার এর আকাল দেখা দিয়েছে। সব মানুষ এখন মাস্ক আর স্যানিটাইজার এর পিছনে ছুটছে। দিগন্তকে ভালো মাস্ক আর স্যানিটাইজার এনে দেবে সহকর্মী অনুপমা। সেইজন্যই আজকে প্লাটফর্মে দিগন্ত অপেক্ষা করছে। অবশ্য অনুপমাকে দিগন্তের শুধুমাত্র সহকর্মী বলা ঠিক হবে না। নর ও নারীর কিছু সম্পর্ককে ঠিক সংজ্ঞা দিয়ে বোঝানো যায় না, দিগন্ত ও অনুপমার সম্পর্কটাও সম্পূর্ণ সে রকম। তবে এই সম্পর্কের মধ্যে যে একটা ভালোলাগা আছে সেটা ওরা কেউই অস্বীকার করে না। দিগন্ত কয়েক মাস হল তার হাইস্কুলের চাকরি থেকে অবসরগ্রহণ করেছে। তবে দিগন্তকে ঠিক ষাটোর্ধ্ব পুরুষ হিসেবে মনে হয় না।
প্রায় পনেরো মিনিট হল দিগন্ত প্লাটফর্মে অপেক্ষা করছে। অন্য সময় দিগন্ত ঘন্টার পর ঘন্টা এখানে বসে থাকতে পারে। যেহেতু অনুপমা তাকে এখানে অপেক্ষা করতে বলেছে সেহেতু এই ষাটোর্ধ্ব বয়সে এসে দিগন্তর কিছুটা ইতস্তত বোধ হচ্ছে। সে বারবার চারপাশে তাকিয়ে দেখছে কেউ ওকে খেয়াল করছে কিনা। আজ সকালে অনুপমা দিগন্ত কে ফোন করে বলেছে কিছু ভালো মাস্ক ও স্যানিটাইজার দেবে, এইজন্যই এই অপেক্ষা। দুʼজনার মধ্যে ভালোলাগার সম্পর্ক এখনও থাকলেও অনুপমা এখন অনেক কম ফোন করে দিগন্তকে। মনে হয় অবসরকালীন কর্মহীন জীবনে সবার কাছেই মানুষের গুরত্ব কিছুটা কমে যায়। অথচ কর্মব্যস্ত জীবনে বছর পাঁচেকের ছোট অনুপমা তাকে কারণে অকারণে বারবার ফোন করত। স্ত্রী মারা যাওয়ার পর দিগন্তের পাশে মানসিকভাবে এসে দাঁড়িয়েছিল অনুপমা। দিগন্ত খেয়েছে কিনা স্নান করেছে কিনা সমস্ত বিষয়ই ফোন করে খোঁজ নিত অনুপমা। “ও দিগন্ত দা, এই যে আমি পেছনে” হাঁক ছেড়ে ডাকে অনুপমা। বরাবরই সৌন্দর্য সচেতন অনুপমাকে এই মধ্য পঞ্চাশেও যথেষ্ট আকর্ষণীয় লাগছে। “এই নাও সব সময় পরে থাকবে, হাত ধোবে। একা একা থাকো, তাই নিজের খেয়াল আরো বেশি করে রাখবে” এই বলেই ডাউন শান্তিপুর লোকালে উঠে পড়ল অনুপমা।
“ ও কি আরও পনেরো কুড়ি মিনিট আগে আসতে পারত না?” মনে মনে কথাগুলি বলে উঠল দিগন্ত। এই নিঃসঙ্গ একাকীত্ব জীবনে শুধু অনুপমাই না, যে কোন মানুষের সঙ্গ পেতে মন চায় দিগন্তের। অল্প বয়সে মানুষ যখন অতি সাহসী থাকে তখন চারিদিকে চারিপাশে প্রচুর লোকজন থাকে, কিন্তু বার্ধক্যে যখন মানুষের অন্য মানুষের সাহচর্য বেশি করে দরকার হয় তখনই তার পাশে কেউ থাকে না। এটাই এখন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। দিগন্তের বন্ধু-বান্ধবদের মধ্যে কেউ কেউ মারা গিয়েছে আবার কেউ কেউ নানান রোগ ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে এখন ঘরেই থাকে। অতএব দিগন্ত এখন প্রায় নিঃসঙ্গ।
মনে পড়ে যাচ্ছে কর্মজীবনের শেষ দিনটার কথা, যেদিন বাড়ি ফেরার সময় অনুপমার ইচ্ছেতে প্রতিদিনকার মত আপ শান্তিপুর লোকালে তারা ওঠেনি। অথচ সেদিন ওই ট্রেনের সহযাত্রীরা দিগন্তের জন্য একটা ছোট্ট বিদায় সংবর্ধনার আয়োজন করেছিল। অনুপমা সেদিন আকস্মিকভাবে দিগন্তের হাতের উপর হাত দিয়ে বলেছিল “ একটু পরে ফিরলে হয় না?” দিগন্ত সেদিন অনুপমার আবেগঘন আবদারটি ফেলতে পারেনি। এরপর ওরা দুʼজনা মিলে কাছেই একটা নিরালা পার্কে গিয়ে বসেছিল। সেখানে সমস্ত অল্প বয়সী যুবক যুবতীদের মাঝে তাদের কিছুটা বেমানান লাগলেও সেদিকে অনুপমা ও দিগন্তের কোন ভ্রুক্ষেপই ছিল না। দুʼজনা আবেগঘন হয়ে হাতের উপর হাত দিয়ে পাশাপাশি কিছুক্ষণ বসেছিল। তারপর শুরু হয়েছিল অনুপমার নিঃশব্দ কান্না। ব্যক্তিগত জীবনে প্রায় নিঃসঙ্গ দিগন্ত অনুপমাকে সেদিন একটি কথাই বলেছিল “ আমাকে ভুলে যেও না”। সেদিন অনুপমার গালের দুইপাশ দিয়ে অবিরামভাবে বয়ে চলেছিল অশ্রুধারা। কি আশ্চর্য! চাকরি জীবনে তারা দীর্ঘদিন পাশাপাশি যাতায়াত করলেও কখনও এইরকম নৈকট্য তাদের মধ্যে আসেনি। আজকের দিনের পর আর নিয়মিতভাবে দেখা হবার সুযোগ নেই বলেই হয়ত এই নৈকট্যটা তাদের দুজনেরই ভালো লেগেছিল।
হঠাৎ করেই দিগন্তের বুকপকেটে রাখা মোবাইলটা বেজে উঠল। “ বাবা তুমি কেমন আছো? চারিদিকে এই করণা পরিস্থিতিতে একটু সাবধানে থেকো। আমাদের এখানকার পরিস্থিতি খুবই ভয়াবহ। দেশে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করছি"। এক নিঃশ্বাসে কথাগুলি বলে চলল কর্মসূত্রে লন্ডনে থাকা দিগন্তের একমাত্র সন্তান সাম্য। “ তোমরা যত শীঘ্রই সম্ভব দেশে ফেরার চেষ্টা কর” কথাগুলি কিছুটা অভিমানের সুরে বলল দিগন্ত। এর আগে একাকীত্ব, অসহায় দিগন্ত বারবার ছেলেকে দেশে ফেরার কথা বললেও সে ব্যস্ততার অজুহাতে না করে দিয়েছে। “ যাক,ছেলে বৌমা এলে কিছুটা একাকীত্ব কাটবে” মনে মনে ভাবল দিগন্ত। স্ত্রী বিপাশা মারা যাবার পর স্কুলে যাতায়াত করে তবুও কিছুটা সময় তার কাটত। কর্মজীবনের থেকে অবসরের পর দিগন্তের সময় যেন থমকে দাড়িয়েছে। স্ত্রী নেই, ছেলে বিদেশে, স্কুলের কর্মব্যস্ত জীবন নেই তার উপর আবার অনুপমা ও দিন দিন ফোন করা কমিয়ে দিচ্ছে। এই সময় আবার চারিদিকে করোনা , করোনা রোগের চিৎকারে কান ঝালাপালা হয়ে যাচ্ছে। এরমধ্যে আবার শোনা যাচ্ছে সারাদেশে লকডাউন ঘোষণা হবে।
“ বাবা, সব ব্যবস্থা হয়ে গেছে। আমি দেশে ফিরছি। কালকে ভোরের ফ্লাইটে রওনা দেব”। উৎফুল্ল মনে কথাগুলো বলল সাম্য। “ যত তাড়াতাড়ি ফিরতে পারো ততই ভালো, শুনছি দেশে লকডাউন ঘোষণা হবে দু-একদিনের মধ্যেই" বলল দিগন্ত। সাম্য কাছে আসবে এই কথা ভেবে থেকে থেকেই দিগন্তের মনে আনন্দ হচ্ছে। এই একাকীত্ব, দুর্বিষহ, অসহায় জীবন দিগন্তের কাছে ক্রমশই অসহ্য ঠেকছে। সে কখনই চায় নি ছেলে বিদেশে চাকরি করে প্রচুর টাকা উপার্জন করুক। কিন্তু সাম্যের মতো বর্তমান কেরিয়ারিস্ট যুব সমাজের চোখে শুধুই বিদেশ আর অধিক উপার্জনের স্বপ্ন। এরা স্বদেশ, বৃদ্ধ বাবা-মা,বন্ধুবান্ধব এইসব আবেগকে সেকেলে মনে করে। করোনা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিধিনিষেধের জন্য বাড়িতে ফিরতে সাম্য ও তার স্ত্রী নিকিতার কিছুটা দেরি হয়ে গেল। বাড়িতে ফেরার পর বাবাকে দেখার আনন্দের থেকেও প্রাণে বেঁচে ফেরার স্বস্তি বেশি করে হল সাম্যের। এই সময়ে লন্ডন তথা সমগ্র ইউরোপে করোনার ভয়াবহতা গা শিউরে ওঠার মত। তুলনায় ভারতে করোনার প্রকোপ এখনও অনেকটাই কম, সেজন্যই সাম্য দেশে ফিরে এসেছে। ভারতে এখনও করোনা সেই ভাবে ছড়িয়ে পড়েনি। এর আগে দিগন্ত বিভিন্ন সময়ে ছেলেকে দেশে ফেরার জন্য বারবার বললেও নানান অজুহাতে সাম্য তার দেশে ফেরা বাতিল করেছে। করোনার ফলে সারা বিশ্বে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হলেও একটা দিক দিয়ে করোনা সদর্থক ভূমিকা নিয়েছে। সবাইকে এই মারণ রোগ ঘরমুখী করে তুলেছে। নিঃসঙ্গ দিগন্তের ছেলের দিকে তাকিয়ে চোখ ছল ছল করে উঠল। সাম্যরা আসার দিনই রাতে সারা ভারতে লকডাউন ঘোষণা করা হল। সাম্য তার বাবাকে দেখে যেরকম উচ্ছ্বাস প্রকাশ করা উচিত ছিল সে তার কিছুই করছে না, এই ব্যাপারটা দিগন্ত কে খুব আঘাত করছে। “ বাবা, তোমার বান্ধবী কি তোমার খোঁজখবর এখন আগের মতই নিচ্ছে?” মৃদু হেসে বলল সাম্য। “ অনুপমা ফোন করা অনেক কমিয়ে দিয়েছে, ঠিক তোমাদের মতই। কাজকর্মহীন অবসরপ্রাপ্ত মানুষকে এখন আর কেউ মনে রাখে না বুঝলে” বলে চলল দিগন্ত।“ তোমাদের মতই মানে, ঠিক বুঝলাম না তো? বিদেশে তুমি আমাদের ব্যস্ততা সম্পর্কে ঠিক জানো না, তাই হয়তো খোঁচা মেরে কথাটা তুমি আমাকে বললে বাবা” রাগের স্বরে বলল সাম্য। এর মধ্যে আবার ঘরে ঢুকে ঘরের এদিক-ওদিকের ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা নোংরা আবর্জনা নিয়ে কিছুটা বাঁকা সুরে কথা বলে গেল নিকিতা।
একেতেই লকডাউনে সারাদিন ঘরে বসে থাকা তার ওপর সাম্য আর নিকিতা এদেশে তাদের থাকার নানান অসুবিধার কথা কানের কাছে বলেই চলেছে অক্লান্তভাবে। এভাবেই কেটে গেল ছয় ছয়টা মাস। এদিকে অনুপমার করা ফোন এর সংখ্যা ক্রমশ কমতে লাগল উল্লেখযোগ্যভাবে। এর মধ্যে আবার দেখা যাচ্ছে করোনার প্রকোপ ইউরোপের থেকে ভারতে অনেক অনেক বেশি হচ্ছে। ভারতবর্ষের চারিদিকে ভয়ংকরভাবে ছড়িয়ে পড়ছে এই রোগ। যতই রোগের প্রকোপ চারিদিকে বাড়ুক,পাশে ছেলে রয়েছে এই ভরসা এখন দিগন্তের আছে। চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের পর ফাঁকা বাড়িতে নিঃসঙ্গ অবস্থায় দিগন্ত ছেলের কাছ থেকে, বৌমা কিংবা অনুপমার কাছ থেকে ঘনঘন ফোন আশা করত। কিন্তু ছেলে, বৌমা, অনুপমা ও অন্যান্য বন্ধুবান্ধব ক্রমশই তাকে ফোন করা কমিয়ে দিচ্ছিল। এই অবস্থায় হঠাৎ করে সাম্যের আগমন দিগন্তের মনকে খুশিতে ভরিয়ে দিল । সূর্য ও মানুষের জীবনের এই একটাই মিল, মধ্য গগনে দুইয়েরই তেজ থাকে অসীম। জীবনের মধ্যাহ্নে দিগন্তের যে তেজিভাব ছিল তা এই সায়াহ্নে এসে দুঃখ ও অভিমানে পরিণত হয়েছে। তাই জীবনের এই পর্যায়ে এসে ছেলে,বৌমা ,অনুপমার বিভিন্ন আচরণে আর ক্ষুব্দ হয় না দিগন্ত। এখন শুধু দুঃখই পায়। ছাত্রজীবনের বামপন্থী আদর্শে বিশ্বাসী দিগন্তের আগে খুব একটা বেশি আবেগ ছিল না। কিন্তু এখন জীবনের এই পর্যায়ে এসে সে খুবই আবেগপ্রবণ সম্পন্ন হয়ে পড়ছে। অনেকদিন পর ছেলে, বৌমা আসায় বাড়ির মধ্যে সেই ফিরে আসা হইচইটা দিগন্ত খুব উপভোগ করছে। মুখে কিছু না বললেও সে হাবেভাবে ছেলেকে বুঝিয়ে দিচ্ছে বিদেশে আর ফিরে না গেলেই ভাল হয়। ওরা বিদেশে ফিরে গেলে আবার সেই একাকীত্ব জীবন কাটাতে হবে এই শঙ্কাটা দিগন্তকে কুরে কুরে খাচ্ছে। তার এখন এই কথাটা বারে বারে মনে হয় বৃদ্ধ বয়সে মানুষের একাকীত্ব জীবন কাটানোটা একটা অভিশাপ।
“ এখন এ দেশের অবস্থা খুব একটা ভালো নয়, তাছাড়া এখানকার চিকিৎসা ব্যবস্থা ও খুব খারাপ। লন্ডনে করোনার প্রকোপ এখন অনেক কম। চলো আমরা লন্ডনে ফিরে যাই”। আশঙ্কা নিয়ে দিগন্তকে বলে নিকিতা। “কথাটা আমিও কিছুদিন ধরে ভাবছি।কিন্তু বাবাকে বলব কিভাবে?” সাম্য কথাটা বলেই দেখল পিছনে বাবা দাঁড়িয়ে আছে। দিগন্ত ছেলের মুখে কথাটা শুনে তাড়াতাড়ি সেই জায়গা থেকে চলে গেল। এরমধ্যে সাম্য ভারত সরকার কর্তৃক বিদেশে যাওয়ার বিশেষ বিমানে করে লন্ডনে ফেরার বন্দোবস্ত করতে লাগল। ফিরে যাওয়ার সব ব্যবস্থা পাকা করার পর সাম্য দিগন্তকে বলল “ বাবা এদেশের করণা পরিস্থিতি এখন খুবই খারাপ। সব ব্যবস্থাই হয়ে গেছে,আমরা কালকের ফ্লাইটে লন্ডনে ফিরে যাব”। কথাটা শুনে দিগন্ত প্রথমে কিছু বলতে না পেরে একদৃষ্টিতে ছেলের দিকে তাকিয়ে থাকল। তারপর বলল “ আমি প্রথম থেকেই জানতাম তোমরা নিজেদের প্রয়োজনেই এই দেশে এসেছো , আমার জন্য নয়। কিন্তু তোমাদের আসার আনন্দে বিভোর হয়ে সব ভুলে গিয়েছিলাম। মাঝে মাঝে অসহায় অবস্থায় মানুষ সব বুঝেও মিথ্যে চিন্তাকে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চায়, বুঝলে। যাও তোমরা বিদেশে নিজেদের মত ভালোভাবে জীবন কাটাও”।
পরের দিন ছল ছল চোখে দিগন্ত দেখল ছেলে, বৌমা বিদেশের উদ্দেশ্যে রওনা দিচ্ছে। রাতে ধুম জ্বর এলো দিগন্তের, সাথে প্রবল শ্বাসকষ্ট। একা অসহায় জীবন কাটানো দিগন্ত বুঝতে পারল মারণ রোগ তার শরীরে বাসা বেঁধেছে। প্রবল জ্বর ও শ্বাসকষ্টে জর্জরিত দিগন্ত মেঝেতে লুটিয়ে পড়ল। থেকে থেকেই যেন দিগন্ত চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছে শিশু সাম্য “বাবা বাবা বাবা" বলে তার কাছে দৌড়ে এগিয়ে আসছে। ধীরে ধীরে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ল দিগন্ত। এরমধ্যে মোবাইলে বারবার অনুপমার করা রিংটোন বেজেই চলল।