বিনোদন

বিনোদন

সেলেবদের ভূত নিয়ে মজার কথা

কলকাতা ১০ মে, ২০২৩

সেলেবদের ভূত নিয়ে মজার কথা ভূত রহস্য এই বিষয় নিয়ে মানুষের আবেগ কম নেই৷ অজানাকে জানা বা ঘটনাকে প্রত্যক্ষ করা এমন মানুষের সংখ্যা আজকের প্রযুক্তির যুগে খুবই বিরল৷ তবুও বিশ্বাস-ভরসা নিছক বিনোদনের দুনিয়ায় কে না গা ভাসাতে চায়, মনকে আনন্দ দিতে চায়৷ ভৌতিক ক্রিয়াকলাপ বা ভূত দর্শন বলুন অথবা রহস্য রোমাঞ্চকর বিষয় আজকের দুনিয়ায় কতটা বাস্তব তাই নিয়ে বিভিন্ন শিল্পী- সাহিত্যিকদের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন প্রসাদ পত্রিকার প্রতিনিধি---ইন্দ্রজিৎ আইচ৷

সন্দীপ রায় (চলচ্চিত্র পরিচালক)

আপামর বাঙালিদের কাছে ভূত বিষয়টা খুব ভয়ের৷ বিশেষ করে যারা গ্রামে বা শহরের বাইরে মফসসলে থাকেন তাদের কাছে খুব আতঙ্কের৷ যে কারণে দেখবেন ভূত তাড়ানোর জন্য কেউ কেউ ওঁনাদের শরণাপন্ন হয়৷ আমার বাবা শ্রী সত্যজিৎ রায় প্রথম ভূতেদের ছবি বানায় ১৯৬৯ সালে গুপি গায়েন বাঘা বায়েন৷ ভারতীয় চলচ্চিত্রে সেটা প্রথম ভূতেদের ছবি৷ সেটা সারা বিশ্বে প্রদর্শিত হয়েছে৷ বাবা ভূত এবং রহস্য এসব খুবই ভালোবাসতেন৷ ফেলুদার সিরিজ এখনও পাঠক মহলে বিপুল জনপ্রিয়তা রয়েছে৷ বাবাই প্রথম ফেলুদা গোয়েন্দা গল্প নিয়ে ১৯৭৪ সালে সোনার কেল্লা বানায়৷ আমার ব্যক্তিগত ভাবে ধারণা মানুষ আজও মনের কল্পনায় বলুন বাস্তবে বলুন ভূত বা রহস্য বিশ্বাস করেন৷ তা না হলে বাবার বা আমার সিনেমাগুলো চলত না৷ আজও টিভিতে সেসব ছবি দিলে মানুষ দেখেন৷ আমি তো ফেলুদা রহস্য রোমাঞ্চ কাহিনি নিয়ে বোম্বাই-এর বোম্বেটে, কৈলাশে কেলেঙ্কারি, গোরস্থানে সাবধান, রয়েলবেঙ্গল রহস্য, টিনটোরেটোর জিশু করেছি, ২০১২-তে যেখানে ভূতের ভয় করেছি, দারুণ চলেছিল৷ বক্স অফিস জমজমাট৷ তাই আমার মতে ভূত বলুন রহস্য চিরাচরিত ভাবে মানুষের অন্তরে একটা সুপ্ত বিশ্বাস রয়েছে৷ সেইজন্য এই বিষয়গুলো নিয়ে আজও ছবি হয়৷ মানুষ দেখতে আসে৷ আনন্দ পায়৷

অরিন্দম শীল (অভিনেতা এবং চিত্র পরিচালক) :

আমি কোনোদিন ভূত দেখিনি৷ কলকাতায় বড়ো হয়েছি৷ কলকাতায় থাকি৷ আমাদের মানব জীবনে কেউ কেউ ভূত বিশ্বাস করে কেউ করে না৷ আমিও বিশ্বাস করি না, তবে কল্পনায় আনতে পারি৷ আমি ভূতের থেকেও রহস্য রোমাঞ্চ বিষয়টাকে বেশি প্রাধান্য দিই৷ তাই আমি এবার শবর, আসছে আবার শবর, হরহর ব্যোমকেশ, ব্যোমকেশ গোত্র ব্যোমকেশ পর্ব, ঈগলের চোখ, মিতিন মাসি বানিয়েছি৷ আমার প্রতিটা সিনেমাই জনপ্রিয়তা পেয়েছিল৷ সব থেকে বড়ো কথা স্রষ্টা৷ ব্যোমকেশ ‘শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়’ না লিখতেন বা গোয়েন্দা শবর শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় না লিখতেন কে জানতে পারত৷ বাঙালিরা সবসময় ভূত ও রহস্য ভালোবাসে৷ তাই বাংলার সংসৃকতি ও বিনোদনের মাধ্যমে এগুলো বেঁচে থাকবে৷

অঞ্জন দত্ত (সঙ্গীতশিল্পী ও অভিনেতা এবং পরিচালক) :

আমি খুব ছোটোবেলা থেকেই সত্যজিৎ রায়ের ফ্যান ছিলাম৷ মধ্য কলকাতার ছেলে আমি৷ আর পাঁচটা বাঙালিদের মতন বড়ো হয়েছি৷ ঠাকুমা-দিদিমার কাছে ভূতের গল্প শুনলেও স্বচ;ক্ষ কোনোদিন ভূত দেখিনি৷ ভূতের থেকে গোয়েন্দা সিরিজ খুব পড়তাম৷ সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, নীহাররঞ্জন গুপ্ত, শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়, শীর্ষেন্দু মুখার্জী এমনকি শার্লক হোমস পড়েছি৷ তাই ছবি করতে গিয়ে প্রথম ব্যোমকেশ আমি করি সিরিজ ভিত্তিক৷ দারুণ সাফল্য ও জনপ্রিয়তা পেয়েছি৷ আমি মনে করি মানুষের জীবনে হাসি-কান্না-প্রেম-বিরহের মতন ‘ভূত-রহস্য’ বিষয়টা আমাদের জীবনে জড়িয়ে থাকবে সারাটা জীবন৷

কবি শ্রীজাত (কবি এবং সঞ্চালক) :

আমি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়কে জীবনের গুরু বলে মানি৷ কৃত্তিবাস করেছি একসাথে৷ জীবনের অনেকটা সময় তার সাথে কেটেছে৷ তাই তার কাকাবাবু যেমন পড়েছি অন্যান্য সাহিত্যিকদের রহস্য ও ভূতের গল্প পড়েছি৷ ব্যক্তিগত ভাবে বলতে পারি ভূত আমার প্রিয় নয়৷ আমি এখন ছবি পরিচালনা করছি৷ রহস্যছবি সমসময় বিনোদনমূলক৷ বাস্তবের অনেক ঘটনা নিয়ে সেসব ছবি হয়, লেখা-গল্প আকারে বের হয়৷ তাই বাঙালি পাঠক সমাজে এবং বিনোদনের দুনিয়ায় এই ভূত ও রহস্য চিরকাল অম্লান হয়ে থাকবে৷

শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় (জনপ্রিয় সাহিত্যিক)

আমি ভূত বা ভৌতিক ক্রিয়াকলাপ কিছুটা বিশ্বাস করি৷ যারা দেখেছেন তারা বানিয়ে কেউ বলার মতন মানুষ নন৷ তবে আমি দেখিনি৷ আমার পরিচিতদের মধ্যে কেউ দেখে গল্প করেছেন৷ আমি তাই জন্য ভূত-রহস্যময় সিরিজ লিখতে আজও পছন্দ করি৷ বিশেষ করে বেশ কয়েকটা রহস্য গল্প লিখেছি গোয়েন্দা শবরকে নিয়ে৷ অরিন্দম শীল সেগুলো নিয়ে ছবি করছেন৷ আমার কাছে এই দুটোই খুবই ইন্টারেস্টিং৷ আমি আজও সত্যজিৎ রায়ের ছবি দেখে যেমন আনন্দ পাই তেমন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় কাকাবাবু পড়ে বা ছবি দেখে মন ভরে যায়৷ বাঙালি পাঠক পাঠিকার কাছে বা কিশোর-কিশোরীদের কাছে ভূত এবং রহস্যময় গল্প বা সিরিজ বা ছবির অ্যাকশন চিরকাল অক্ষুণ্ণ্ থাকবে৷

কল্যাণ সেন বরাট (সঙ্গীত পরিচালক) :

প্রথমেই বলি ভূত আমি বিশ্বাস করি না৷ ভূত বলতে বোঝায় অতীত৷ আমি কোনোদিন ভূত দেখিনি৷ যারা দেখেছেন তাদের মনের ভুল৷ এর কোনো সত্যিকারের আইডেনটিটি নেই, হবেও না৷ আমি আত্মায় বিশ্বাস করিনা৷ তবে হ্যাঁ যে কোনো ছবি দেখতে খুব মজা পাই৷ নিছক বিনোদন৷ যেমন আমরা ক্যালকাটা কয়ার থেকে গুপি বাঘার কাণ্ড করেছিলাম, সেখানেও ভূতেদের আগমন আছে, ভূতের রাজার ডায়লগ আছে৷ সে নাটক সকলের ভালো লেগেছিল৷ পরে আমরা ভূষণ্ডির মাঠ মঞ্চস্থ করি৷ আর রহস্য রোমাঞ্চ ছবি ও সত্যজিৎ রায়ের দেখেছি৷ সেও তো অসাধারণ জয়বাবা ফেলুনাথ, সোনার কেল্লা, চিড়িয়াখানা কিন্তু এখন গোয়েন্দা সিরিজ গুলো থ্রিলার এবং ভায়োলেন্সে ভরা তাই দেখতে ভালো লাগে না৷ তবে আমাদের ছোটোবেলায় ৫০ পয়সা দিয়ে স্বপনকুমারের গোয়েন্দা সিরিজ দীপক চ্যাটার্জী রতনলাল-এর সব গল্প পড়তাম৷ ৫০-৬০-এর দশকে সে এক দারুণ সময় কেটেছে৷ রহস্য আর ভূত-এর ছবি যদি মেকিং ভালো হয় তবেই দেখি৷ এই দুটি বিষয়ে বাঙালির আবেগ৷ থাকবেই থাকবে৷


Copyright © 2022 Rupkatha Live. All Rights Reserved. Powered by : Technotrick Systems.